রবীন্দ্রপ্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত করে সাহিত্যচর্চা করেছিলেন বলে ত্রিশের কবি, কল্লোলের কবি কিংবা পঞ্চ পাণ্ডব—এসব নামেই ডাকা হতো জীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে ও সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে। তাঁদের মধ্যে এখনো বেশি পঠিত ও আলোচিত হচ্ছেন জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্র ও নজরুলের পরে বাংলা কবিতায় বাঁকবদলের অন্যতম কারিগর তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং এখন পর্যন্ত তা বজায় আছে।
তাঁর কাব্যে প্রধান অনুষঙ্গ প্রকৃতি। তাঁর কাব্যে এসেছে নারীও। কখনো শাশ্বতী, সুরঞ্জনা আবার কখনো বনলতা সেন। তাঁর কল্পিত নায়িকারা যেন রক্ত-মাংসের মানবী। প্রকৃতির রূপ লাবণ্যের সব উপকরণ দিয়ে তিনি তাঁদের সাজিয়েছেন। আবার তাঁদেরই তিনি ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতা, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তিনি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। বরিশাল ব্রজ মোহন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বি এম কলেজ থেকে আইএ এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ এম এ পাস করেন। আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পরীক্ষা দেননি। এরপর তিনি ১৯২২ সালে কলকাতার সিটি কলেজে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। এখান থেকে তাঁর চাকরি চলে যায়। কিছুদিন খুলনার রাজারহাট কলেজ, দিল্লির রামযশ কলেজ, বরিশালের বি এম কলেজ এবং খড়গপুর কলেজে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। তারপর কর্মহীন জীবনের শুরু। জীবনের বেশির ভাগ সময় বেকারত্ব তাঁর পিছু ছাড়েনি। তবে তাঁর লেখালেখি থেমে থাকেনি।
১৯২৭ সালে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ প্রকাশিত হয়। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ এবং অন্নদাশঙ্কর রায় ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। তিনি একই সঙ্গে কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। কবিতার পাশাপাশি ২১টি উপন্যাস এবং দেড় শর কাছাকাছি ছোটগল্প লিখেছেন। কিন্তু একটিও প্রকাশ করেননি।
১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতায় ট্রামের ধাক্কায় আহত হন তিনি। ২২ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।