হালুয়াঘাট উপজেলায় শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা। কিন্তু শ্রমিকসংকটে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। তাঁরা বলছেন, দুই মণ ধান বিক্রি করে এক জন শ্রমিকের মজুরি দিতে হচ্ছে।
অনেকেই লোকসান জেনেও ফসল ঘরে তুলতে ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, একসঙ্গে সবার ধান পেকেছে। এই কারণে কৃষকদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে শ্রমিকসংকট মোকাবিলায় কৃষকদের ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে মাড়াই যন্ত্র দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সর্বমোট ২২ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এসব জমিতে কৃষকেরা উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৩৬, ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮১, গুটি স্বর্ণা ও স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ করেছেন। তবে কিছু এলাকায় আগাম জাতের ব্রি ২৮ ও ৮১ জাতের ধানে চাষ করা হয়েছে। কিন্তু শেষ সময়ে শিলাবৃষ্টি ও রোগবালাইয়ের কারণে কৃষকেরা কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সেই ক্ষতি পূরণ করতে এখন চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ।
গত বুধবার ধুরাইল ইউনিয়নের গোরকপুর, চরগোরকপুর, ধুরাইল ও ধারা ইউনিয়নের পূর্ব ধারা, মাঝিয়াল এলাকায় কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার রোগবালাই আর শিলাবৃষ্টির কারণে আশানুরূপ ফলন ঘরে তোলা যাচ্ছে না। এ বছর একরপ্রতি ধান উঠছে ৪০ থেকে ৪৫ মণ। যেখানে গত বছর ৫০ থেকে ৬০ মণ ধান ওঠানো গেছে। এ ছাড়া ধান কাটার শ্রমিক সংকট ও মজুরির বেড়েছে। একরপ্রতি ধান কাটতে শ্রমিকের মজুরি দিতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা।
চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ করে ক্ষতির মুখে পড়ে আক্ষেপ করেন হালুয়াঘাট উপজেলার গোরকপুর গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ধার-দেনা করে বোরো আবাদ করছি। শেষ সময়ে শিলাবৃষ্টি আর পোকার আক্রমণে অর্ধেক ধান মারা। এখন শান্তিতে ধান কেটে ঘরে তোলারও উপায় নেই। ২ মণ ধান বেচে ১ জন শ্রমিকের মজুরি দিতে হচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখ আর কী আছে?’
কথা হয় ধারা এলাকায় ধান কাটার শ্রমিক হাফিজুলের সঙ্গে। পেশায় তিনি অটোরিকশা চালক। তিনি বলেন, ‘কামলার মজুরি বেশি থাকায় অটোরিকশা চালানো বাদ দিয়ে দৈনিক ১ হাজার ২০০ টাকায় মজুরিতে ধান কাটছি। সারা দিন অটোরিকশা চালিয়ে ৫০০ টাকা আয় হতো। কিন্তু শ্রমিক হিসেবে দিনে ১২ শ টাকা আয় হচ্ছে তাই তিনি পেশা বদল করেছি।’