একটা দারুণ ব্যাপার ঘটতে ঘটতেও ঘটল না। ব্যাপারটা দারুণ! আর একটু হলেই একজন সুবিখ্যাত কণ্ঠশিল্পীর জীবন বদলে যেত। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে বেঁকে না বসলে তিনি হয়তো হতেন বিখ্যাত নায়ক।
কাণ্ডটা ঘটাচ্ছিলেন কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র। ঘটনাটি ১৯৩৪ বা ১৯৩৫ সালের দিকে। তখনো ব্রিটিশ আমল। একটি নম্র-ভদ্র ছেলে তখন প্রেমেন্দ্র মিত্রের বাড়িতে আসত। পাশের কারও বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হারমোনিয়ামে তার গানও শুনেছেন তিনি। মিষ্টি গলা। একজন স্বনামধন্য গায়কের গানের ধরনে গান গাইত সে ছেলে। নিজের মতো হয়ে ওঠেনি তখনো।
প্রেমেন্দ্র মিত্র তখন কবিতা-গল্প-উপন্যাস থেকে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রের দিকে ঝুঁকছেন। দেবদত্ত ফিল্মস নামে একটি স্টুডিও তখন স্থাপিত হয়েছে তাঁর বাড়ির কাছেই। সে স্টুডিও স্মরণীয় হয়ে আছে ‘পথ ভুলে’, ‘গ্রহের ফের’, ‘গোরা’র মতো ছবি প্রযোজনা করে।
যে ছেলেটির কথা বলা হচ্ছে, সেই দীর্ঘাঙ্গি, চেহারাও তার নায়ক হওয়ার মতো। তাকেই একদিন তিনি নিয়ে গেলেন সেই স্টুডিওতে। ভয়েস টেস্ট হলো, ক্যামেরা টেস্ট হলো। দুটোতেই পাস। ছেলেটি একটু রোগাটে বটে, কিন্তু কণ্ঠ আর চেহারা দিয়েই সে মুশকিল আসান করে দিল। স্টুডিওর কর্তাব্যক্তিরা ছেলেটাকে নায়ক হিসেবে নামাতে আপত্তি জানালেন না। যে পরিচালকের ছবি, তিনিও খুঁজছিলেন নতুন মুখ। সুতরাং ছেলেটির জন্য নায়ক হওয়ার সব পথ একেবারে খোলা। ছবিতে অভিনয় করলেই সে ছেলে হয়ে উঠতে পারত বাংলা সিনেমার নায়ক।
কিন্তু সে ঘটনা ঘটল না। বাইরে থেকে কেউ ওকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেনি। বেঁকে বসল সেই ছেলেই। অগ্রজ হিসেবে প্রেমেন্দ্র মিত্রের অনুরোধ ঠেলতে না পেরেই স্টুডিওতে পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু নিজের মতো করে সরে দাঁড়িয়েছে। এরপর প্রেমেন্দ্র মিত্রের চোখের সামনে আসেনি অনেক দিন।
ছেলেটি কিছুদিন পর থেকেই সংগীতজগতে নাম লেখাল এবং একসময় হয়ে উঠল সুরের জাদুকর।
নাম তাঁর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
সূত্র: প্রেমেন্দ্র মিত্র, স্মৃতিকথা ও অন্যান্য, পৃষ্ঠা ২৫৬-২৫৭