ভোলার বোরহানউদ্দিনে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জেলার ৫৫০ বছরের পুরোনো সুরমা প্রাসাদ। উপজেলার সাঁচরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গুড়িন্দাবাড়িতে দেখা মেলে এই পুরোনো স্থাপনার। জেলা তথ্য বাতায়নে ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি বিভাগে ভোলায় এর চেয়ে পুরোনো কোনো স্থাপনার উল্লেখ নেই। তৎকালীন সময়ের এই নির্মাণশৈলীতে মুগ্ধ সবাই। সরকারিভাবে এ পুরাকীর্তি সংরক্ষণের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বরিশাল বিভাগের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, প্রায় ৫৫০ বছর আগে চন্দ্রদ্বীপের (বর্তমান পটুয়াখালীর অংশ) রাজা জয়দেবের ছোট মেয়ে বিদ্যা সুন্দরী ও জামাতা গুড়িন্দার (রাজসভার মন্ত্রী ছিলেন) জন্য ওই রাজবাড়ি নির্মাণ করা হয়। গুড়িন্দা ১৪৭৫ সালে বিদ্যা সুন্দরীর নামে বিশাল দিঘিও খনন করেন। এলাকায় সেই দিঘি নিয়ে নানা কল্পকাহিনি প্রচলিত রয়েছে।
তবে প্রফেসর মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরীর ‘ভোলা জেলার ইতিহাস’ ও এবিএম আমিনউল্যাহর ‘বোরহানউদ্দিন থানার ইতিহাস’ থেকে জানা যায়, রাজা জয়দেব তাঁর মেয়ে বিদ্যা সুন্দরীকে তাঁরই রাজ্যসভার গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে বিয়ে দেন। পরে মেয়ে ও জামাতার জন্য তিনি ওই রাজকীয় প্রাসাদ নির্মাণ করেন। রাজার জামাতা গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতেন বলে একসময় ওই বাড়ির নাম ছিল গোয়েন্দাবাড়ি। ধারণা করা হয়, জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর কালক্রমে ওই বাড়ির নাম গুড়িন্দাবাড়ি হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির দক্ষিণ ভিটায় অবস্থিত এ স্থাপত্যের সামনের অংশে নানা ধরনের নকশা করা। অনেক জায়গায় পলেস্তারা খসে গেছে। অযত্নে দেয়ালের গায়ে শেওলা জন্মেছে। প্রাসাদটির প্রবেশদ্বার একটি, যার প্রস্থ তিন ফুট আর উচ্চতা পৌনে ছয় ফুট। ভেতরের দেয়ালে রয়েছে বিভিন্ন নকশা ও আলপনা। বারান্দা থেকে ভেতরের ঘরে প্রবেশের জন্য রয়েছে দুটি দরজা। ওই দরজা দুটির উচ্চতা মাত্র সাড়ে চার ফুট। দেয়াল ও ছাদে চুন-সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। দেয়ালের প্রস্থ কমপক্ষে ২৫ ইঞ্চি এবং ছাদের প্রস্থ ১০-১১ ইঞ্চি। ভবনটির মেঝেতে ক্ষয় ধরেছে। পশ্চিম দিক দিয়ে ইট-সুরকির সিঁড়ি সরাসরি ছাদের সঙ্গে মিশেছে। ভবনের পেছনের দিকে ২-৩টি সুড়ঙ্গ মুখ রয়েছে। সিঁড়িতে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৬ ইঞ্চি।
ভবনের বাসিন্দা আ. লতিফ জানান, একসময় তাঁর দাদা আ. আজিজ, দাদার ভাই দেলোয়ার হোসেন ও ফজলে করিম একসঙ্গে থাকতেন। তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁর বাবা আ. কাদের ও পরবর্তী ওয়ারিশগণও বসবাস করেছেন। এখন দেলোয়ার হোসেনের নাতি ৬২ বছর বয়সী নান্নু গুড়িন্দা ওই ঘরে থাকেন। নান্নু গুড়িন্দা ও আ. লতিফ গুড়িন্দা জানান, সরকারিভাবে ঘর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই।
এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আ. সাত্তার ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মেহেদি হাসান আজকের পত্রিকাকে জানান, ওই সময়ে এ ধরনের স্থাপত্য নির্মাণ সত্যিই বিস্ময়কর। আর এত বছর টিকে থাকার পর বর্তমান অবস্থায় থাকা আরও বিস্ময়কর। প্রবীণ সাংবাদিক ও সমাজকর্মী ওমর ফারুক তারেক জানান, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এ স্থাপনা একটি জ্বলন্ত দলিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান জানান, অবিলম্বে ওই প্রাচীন স্থাপনা পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।