সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় কবি ও ছড়াকার। একই সঙ্গে মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক প্রভৃতি বিষয়ে তিনি ছিলেন পাণ্ডিত্যের অধিকারী।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিকটবর্তী নিমতা গ্রামে। তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বর্ধমানের চুপী গ্রাম। তাঁর দাদা অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন উনিশ শতকের নবজাগরণের অগ্রদূত এবং ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদক।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৯৯ সালে এন্ট্রান্স পাস করেন এবং ১৯০১ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এফএ পাস করেন। বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে বাবার সঙ্গে পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনায় যুক্ত হন। কিছুদিন পর ব্যবসায় মনোনিবেশ না করতে পেরে সবকিছু ছেড়ে কবিতা লেখায় মন দেন।
ছন্দ-সম্পর্কিত প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ সরস্বতী’ ১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় প্রকাশিত হলে চারদিকে সত্যেন্দ্রনাথের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে ‘ছন্দের যাদুকর’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত একাধিক ছদ্মনামে কাব্যচর্চা করেছেন। যেমন নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর ইত্যাদি।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় ফুটে উঠেছে নানা ভাষার শব্দের নিপুণ ছন্দের সমাহার। তিনি বিদেশি কবিতার সফল অনুবাদকও ছিলেন। আরবি, ফারসি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেছেন তিনি। তাঁর অনূদিত গ্রন্থগুলো হলো: তীর্থ রেণু, তীর্থ সলিল, ফুলের ফসল ইত্যাদি।
দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু। সমাজের নিম্নশ্রেণির মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো: সবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেণু ও বীণা, হোম শিখা, ফুলের ফসল, কুহু ও কেকা, তুলির লিখন প্রভৃতি।
রবীন্দ্র যুগের খ্যাতনামা ‘ছন্দোরাজ’ এই কবি মাত্র ৪০ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন মারা যান।