সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনের দুই গ্রুপসহ নানা অভিযোগে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিন টেকনাফ গিয়ে দেখলেন দুই গ্রুপের সংঘাত-সংঘর্ষ। গত রোববার বিকেলে তাঁদের সামনেই উপজেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় নেতারা তাৎক্ষণিক তাঁদের নিবৃত্ত করে জরুরি বৈঠক শেষ করে স্থান ত্যাগ করেন।
গত রোববার বিকেলে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠক চলকালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি, বিক্ষোভ-স্লোগানে প্রকম্পিত হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়।
জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম মুন্নাকে সভাপতি ও নুরুল মোস্তফাকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেয় এক বছর আগে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে এই এক বছরের মধ্যে দুজন দুই মেরুতে রাজনীতি করছে। উপজেলার প্রায় ইউনিয়নের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর আগে। এসব কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিয়ে করে সন্তানের জনক হন। অনেকের বিরুদ্ধে মাদক মামলা, অনেকেই জেলে, আবার কেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদকের তালিকাভুক্ত।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ঘোষণা দেয় ১৩ এপ্রিল। এরই কারণে তদন্তে নামেন তাঁরা।
গত রোববার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক হয়। এতে ওই কমিটির দুই সদস্য ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মাহমুদুল হাসান ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক এস এম রিয়াদ হাসান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান।
সভায় উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অনুভূতি প্রকাশের শেষ পর্যায়ে হোয়াইক্যং শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ফরহাদুল তাঁর বক্তব্যে দুজন দুই মেরুতে অবস্থানের বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামের কয়েকজন সমর্থক এতে বাধা দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। পরে কেন্দ্রীয় ও জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ফরহাদ বলেন, ‘ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছিলাম; এমন সময় শত শত নেতা-কর্মীর সামনে আমাকে হামলা করে। তৃণমূল তাঁদের সুখ-দুঃখ উপস্থাপন করবে—এটাই স্বাভাবিক। এতে হামলা করে গ্রুপিংয়ের বিষয়টি তাঁরাই জানান দেন।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘তদন্ত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে টেকনাফ গিয়ে বৈঠক করেছি। বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ঘটনাস্থলে সমাধান করা হয়েছে।’
টেকনাফ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোস্তফা জানান, কোনো এক অদৃশ্য কারণে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল তাঁকে এড়িয়ে চলছে। একাধিকবার যোগাযোগ করা সত্ত্বেও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথা নেই।