বর্ষা মৌসুম শেষে বাংলার প্রকৃতিতে বিরাজ করছে হেমন্ত। হেমন্তে হাওর, বিল-ঝিলে কমতে শুরু করে পানি। এ সময় বিল-ঝিলে মাছ ধরার ধুম পড়ে। সারা দেশের মতো মৌলভীবাজারের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকায় মাছ ধরার পাশাপাশি শুরু হয়েছে শালুক ফল তোলা। এই শালুক প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে হাটে-বাজারে। দামও বেশ। চাহিদা থাকায় মৌলভীবাজারের শালুক যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ কুমিল্লা, সরাইল, ভৈরব, নরসিংদী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
ভাটি বাংলার আদি এবং জনপ্রিয় এই ফল একটা সময় হাওর এলাকায় গরিবের খাবার হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে এখন ধনীরাও শখ করে কেনেন এই ফল।
হাইল, কাওয়াদীঘী ও হাকালুকি হাওর এলাকা বর্ষা মৌসুমে পানিতে টইটম্বুর হয়ে পড়ে। এ সময় থোকায় থোকায় ফুটতে থাকে শাপলা ফুল। সঙ্গে শালুক। হেমন্তে সংগ্রহ করা হয় শালুক।
হাইল হাওর এলাকার কালাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বাছিদ বলেন, ‘জমির আগাছা পরিষ্কার করার সময় শালুক তোলা হয়। বাজারে চাহিদা থাকায় এই ফল তুলে বিক্রি করি। খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করি। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি বিক্রি করতে পারি।’
কাওয়াদীঘী হাওর পাড়ের বাসিন্দা রাসু দাস বলেন, ‘হাওরের পানি কমছে। হাওর থেকে তোলা শালুক পাইকারেরা কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন।’
শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী তবারক মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি শালুক বিক্রি করি। তবে আগের মতো শালুক পাওয়া যায় না। চাহিদাও কম।’
শালুক হজমশক্তি বাড়ায়। এই ফল আগুনে পুড়িয়ে কিংবা সিদ্ধ করে খাওয়া যায়। দ্রুত ক্ষুধা নিবারণের সঙ্গে শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, ‘শালুক আবাদ করতে হয় না। এগুলো প্রাকৃতিকভাবেই জন্মায়। শালুক শাপলা গাছের গোড়ায় জন্মানো এক ধরনের সবজি জাতীয় খাদ্য। শাপলা গাছের গোড়ায় একাধিক গুটির জন্ম হয়, যা ধীরে ধীরে বড় হয়ে শালুকে পরিণত হয়। শালুকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা পিত্তের প্রশান্তিদায়ক ও পিপাসা নিবারণ করে।’
শালুকে ঔষধি গুণও রয়েছে। চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে শালুক বেশ উপকারী।
একটি ১০০ গ্রাম ওজনের শালুকে খনিজ পদার্থ রয়েছে ১ দশমিক ৩ গ্রাম, আঁশ ১ দশমিক ১ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ১৪২ কিলোক্যালোরি, প্রোটিন ৩ দশমিক ১ গ্রাম, শর্করা ৩১ দশমিক ৭ গ্রাম এবং ক্যালসিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম।