‘সেই ২০১৮ সাল থেকে এখন ২২ সাল শুরু হইলো। হকার এখনো ফুটপাতে বইসা ব্যবসা করে। এত মারামারি, এত কাহিনি। কোনো কিছুই হকারগো ব্যবস্থা কইরা দিতে পারল না। করোনার আগে শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা (ইজিবাইক) ঢোকার সাহস পাইত না। হেই রিকশা এখন পুরা শহরে ঘোরে। রাস্তায় জ্যাম আর ফুটপাতে হকার। শান্তি নাই রাস্তাটায়।’
কথাগুলো বলছিলেন যানজটে আটকে থাকা ষাটোর্ধ্ব রিকশাচালক মকবুল হোসেন। প্রায় ১২ বছর রিকশা চালান তিনি। প্যাডেলচালিত রিকশাটি তাঁর নিজের। আগে ভাড়ায় চালাতেন। টাকা জমিয়ে বছর পাঁচেক আগে নিজেই কেনেন। সিটি করপোরেশনে চলাচলের জন্য রেজিস্ট্রেশনও করিয়েছেন। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে ইজিবাইকের দৌরাত্ম্যে যাত্রী কমেছে তাঁর। শহরের অবস্থা কেমন—জানতে চাওয়ার জবাবে এমনই জবাব আসে মকবুলের কাছ থেকে।
মকবুল হোসেন থাকেন ফতুল্লার কাশিপুর এলাকায়। প্রতিদিন সকাল বেলা দেওভোগ হয়ে চলে আসেন মূল শহরে। আসার পথে বাবুরাইল খাল আর শেখ রাসেল পার্কের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সড়কের অব্যবস্থাপনা দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে তাঁর কাছে।
যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যান চলাচলের জন্য লেন কয়েক বছর আগে মেনে চলা হলেও এখন ইজিবাইকের কারণে কোনোটিই মানা হচ্ছে না। ধারণক্ষমতার বেশি ইজিবাইক চলায় স্তব্ধ হয়ে থাকে নগরীর যান চলাচল। আর তাতেই আপত্তি মকবুলের মতো অসংখ্য প্যাডেলচালিত রিকশাচালকের।
মকবুল জানান, রেজিস্ট্রেশন করে রিকশা নবায়ন করতে হয় তাঁর। অথচ ইজিবাইকচালকদের এসব ঝামেলা নেই। বৈধ রিকশাচালকদের ওপর নানান শর্ত, আর অবৈধরা দিনের পর দিন যাত্রী পারাপার করে বৈধ চালকদের লোকসানের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে রূপ দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ শহরকে। যুক্ত করা হয় বন্দরের কদমরসুল পৌরসভা ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা। প্রশাসক থেকে বেরিয়ে সিটি করপোরেশন যুগে প্রবেশ করে রাতারাতি অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও মৌলিক কিছু সমস্যার এখনো সমাধান হয়নি। রাজউক, সিটি করপোরেশন, ট্রাফিক বিভাগসহ একাধিক দপ্তরের মাঝে সমন্বয়হীনতা এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি হাজি নূর উদ্দিন।
১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুমন বলেন, সিটি করপোরেশনের কারণে রাস্তাঘাট আগের থেকে সুন্দর ও আধুনিক হয়েছে। কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনো দুর্বল। ১০ বছরেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় খুব বেশি অবদান রাখতে পারেনি নাসিক। উল্টো এই শহরেই বর্জ্য ফেলা নিয়ে ডিসির বাড়ির সামনে ময়লা রেখে আসা কিংবা হকার নিয়ে মারামারির মতো ঘটনা ঘটেছে। গায়ের জোরে সমস্যার সমাধান যে স্থায়ী হয় না, তা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছে সবাই।
শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শহর হিসেবে যতটুকু উন্নয়ন দরকার তা হয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু হোল্ডিং ট্যাক্স যখন ২২ শতাংশ দিই অথচ পান করার মতো পানি পাই না, তখন নাসিকের কাজ নিয়ে আক্ষেপ লাগে। রাতের বেলা ঝাঁকে ঝাঁকে মশা বাড়িঘরে ঢোকে। অবৈধ রিকশার দাপটে হেঁটে চলাচল করা দায়। এগুলো সমাধানে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।’
ঠিক এসব ইস্যুতেই সরব হয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রতিপক্ষরা। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘মানুষ ভোট দেবে সেবা পাওয়ার জন্য। ২২ শতাংশ কর দিয়ে যখন মানুষ পান করার মতো পানি পাবে না, তখন ক্ষোভ জন্মাবেই।’ একই সুরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুই মেয়র প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের মুফতি মাসুম বিল্লাহ ও খেলাফত মজলিশের এ বি এম সিরাজুল মামুন।