পৃথিবীর আয়ু আর কত দিন? জটিল এ প্রশ্নের উত্তর সহজ না হলেও সাম্প্রতিক কার্যক্রম বলে দিচ্ছে বাসযোগ্য এ গ্রহ বাসের অযোগ্য হতে বেশি দিন নেই। সেই তাগিদ থেকেই মানুষ অনেক দিন ধরে মহাবিশ্বে নতুন ঠিকানার অনুসন্ধান শুরু করেছে। কিন্তু তার খোঁজ পাওয়া তো আর যে সে কথা নয়! ঠিক এ কারণেই মহাকাশে মানুষের ‘চোখ’ হয়ে উঠেছে দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা টেলিস্কোপ।
পৃথিবীর অভিকর্ষজ বলকে উপেক্ষা করে ১৯৬১ সালে প্রথম মহাকাশ ভ্রমণে যান রুশ নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন। তিনি অবশ্য খুব বেশি দূর যাননি। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেই ফিরে এসেছেন। এর আট বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অ্যাপোলো-১১ মিশনে চাঁদের বুকে প্রথম মানুষের পা পড়ে। এ ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময়। মানুষ এখন মঙ্গল জয়ের চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে সৌরজগতের এই লাল গ্রহে নাসার পারসেভারেন্সসহ কয়েকটি স্বয়ংক্রিয় যান পাঠিয়েছে মানুষ। শুধু তা-ই নয়, সৌরজগতের গণ্ডি পার হওয়ারও চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে না জেনে-বুঝে তো আর যেকোনো জায়গার উদ্দেশে রওনা হওয়া যায় না। এখানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নাসাসহ বিভিন্ন দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিভিন্ন দূরবীক্ষণ যন্ত্র। এমনই কয়েকটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র হলো হাবল স্পেস টেলিস্কোপ, জেমস ওয়েব, ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ।
মার্কিন ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিসিন প্রতি ১০ বছরের জন্য গবেষক ও বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট লোকদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা সংগ্রহ করে। এরপর তা প্রকাশ করে। বিজ্ঞানভিত্তিক মার্কিন সাময়িকী সায়েন্স নিউজ বলছে, এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এবারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২২ সাল থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত আরও আধুনিক প্রযুক্তির টেলিস্কোপের দিকেই বেশি নজর দিতে চায় নাসা। তবে এ ক্ষেত্রে যৌথ বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞেরা। এর ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট প্রকল্প যেমন নতুন প্রযুক্তির মহাকাশযান উদ্ভাবন ও তা পাঠানোর দিকে মনোযোগী হতে হবে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোনাথন ফর্টনে বলেন, নতুন প্রযুক্তির টেলিস্কোপ মানেই বিশাল খরচ। কোনো দেশের একার পক্ষে এটা কঠিন। কারণ, এমনটা করলে অন্য প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে।
মহাবিশ্বকে আমাদের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে হাবল টেলিস্কোপ। গ্রহ, নক্ষত্র কিংবা গ্রহাণুর দারুণ সব ছবি তুলেছে এটি। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে। এরই হাত ধরে আগামী দশকে অবলোহিত, অপটিক্যাল এবং অতিবেগুনি রশ্মিনির্ভর টেলিস্কোপ বানাবে নাসা। যা হাবল এবং জেমস ওয়েবের চেয়েও শক্তিশালী। হাবলের চেয়ে দ্বিগুণ প্রশস্ত জায়গা থাকবে এর আওতায়। আমাদের সৌরজগতের বাইরের গ্রহও শনাক্ত করতে পারবে। ১ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ পড়বে এই প্রকল্পে। টেলিস্কোপটি ২০৪০ সালে মহাকাশে পাঠানো যাবে।