ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁর বড় ভাই ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ যখন মাইহারে ছিলেন, তখন তিনি চিঠি পাঠিয়ে ছোট ভাইকে নিজের কাছে নিয়ে যান। সেখানে কয়েক বছর তালিম দেন। এরপর তিনি ছোট ভাইকে বলেন, ‘গুরু ওয়াজির খাঁর কাছে যাও, সেখানে হবে তোমার পরবর্তী তালিম।’
আয়েত আলী খাঁ গেলেন ওয়াজির খাঁর কাছে। ওয়াজির খাঁ শিষ্যরূপে গ্রহণ করলেন তাঁকে। শুরু হলো ‘ইমন’ রাগের ওপর তালিম নেওয়া। সেই তালিম চলতে লাগল দীর্ঘদিন। একসময় হতাশ হয়ে পড়লেন আয়েত আলী খাঁ। গুরু কি নতুন কিছু শেখাবেন না?
নিজের এই রাগের কথা তিনি জানালেন আলাউদ্দিন খাঁকে। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ছোট ভাইয়ের কথা শুনে হাসলেন। বললেন, ‘আমি তোমার কথা ওস্তাদজিকে বলব।’
আলাউদ্দিন খাঁ ওস্তাদ ওয়াজির খাঁকে সে কথা জানাতেই তিনি বললেন, ‘আজ রাতেই তুমি তোমার ভাইকে এখানে হাজির করো।’
আয়েত আলী খাঁ এলেন। ওয়াজির খাঁ বললেন, ‘যন্ত্র নিয়ে বসো।’
যন্ত্র নিয়ে বসলে বললেন, ‘এত দিন যা শিখেছ, তা বাজাও।’
গুরুর কথামতো ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ বাজাতে শুরু করলেন। ওয়াজির খাঁ বললেন, ‘তোমার কতগুলো রাগ শেখা দরকার? আমি তো তোমাকে সব রাগই শিখিয়ে দিয়েছি। এবার রে রে কোমল করে বাজাও।’
বাজাতেই তিনি বললেন, এটা পুরিয়া কল্যাণ। এবার ইমনের রে ধা কোমল করে বাজাও। এটা পুরিয়া ধানেশ্রী। এবারে রে কোমল করে পা বর্জিত করে ধা শুদ্ধ করে বাজাও। এটা ‘রাগ মারওয়া।’ এবারে রে ধা কোমল আর সব শুদ্ধ করে বাজাও, এটা ভাঁয়রো। আবার রে গা ধা নি কোমল করে বাজাও, এটা রাগ ভৈরবী।’
এ রকম চলতে থাকলে কোথায় পৌঁছাবে বুঝতে পেরে আয়েত আলী খাঁ গুরুর পায়ের কাছে এসে বসলেন। বললেন, ‘আমার আর রাগের প্রয়োজন নেই।’
সূত্র: কামরুজ্জামান মণি, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, জীবন ও সাধনা, পৃষ্ঠা ৫৫-৫৬