নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে মুখ থুবড়ে পড়েছে উন্নয়নকাজ। কোনো কোনো প্রকল্পের কাজে চলছে ধীর গতি। শুধু সরকারি কাজ নয়, বন্ধ আছে গ্রাম-গঞ্জে বাড়িঘর নির্মাণও। ঠিকাদারেরা জানান, নির্মাণ উপকরণের দাম হু হু করে বাড়তে থাকায় সরকারি উন্নয়নকাজে আগের চুক্তিতে তাঁদের পোষাচ্ছে না। এ কারণে কাজের গতি কমে গেছে।
তবে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা জানান, দাম বাড়লেও কিছু করার নেই। ঠিকাদারদের ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে। চুক্তিমতে তাঁদের কাজ করতেই হবে।
সৈয়দপুর এলজিইডির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে উপজেলায় প্রায় ৯৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া অন্য কাজের ক্ষেত্রেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজে ধীর গতি। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজগুলো শেষ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলায় রংপুর বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়ে) আওতায় সিংহভাগ সড়ক ও সেতু মেরামত কাজ হয় বন্ধ রয়েছে কিংবা ধীর গতিতে চলছে। অভিন্ন চিত্র উপজেলার শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগেও। বর্তমানে সৈয়দপুরে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের প্রায় ১৪ কোটি ২৩ লাখ ৪৬ অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলমান। নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্ধের পথে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ। এসব কাজে গতি একেবারেই নেই বললেই চলে।
শহরের বিভিন্ন রড-সিমেন্টের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে বিক্রি কমেছে অর্ধেক। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিমেন্ট প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ৭০ টাকা। ৪৪০ টাকার এক বস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫১০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ৭৮ টাকা কেজি দরে রড বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯১ টাকা দরে। প্রতি হাজার ইটে দাম বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। শুধু রড-সিমেন্ট কিংবা ইটেই না, বেড়েছে ইলেকট্রনিকস পণ্যের দামও। ফলে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে।
কাজের গতি না থাকার কারণ জানতে চাইলে এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যে হারে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে তাতে প্রতিটি কাজে আমাদের লোকসান হবে। এমন অবস্থায় কোটি কোটি টাকার কাজ কীভাবে চালিয়ে যাব, সেটাই ভাবছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে হলে হয় নিম্নমানের কাজ করতে হবে। আর ভালো মানের করতে নিজের বাড়িঘর বিক্রি করতে হবে। তাই আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছি। নির্মাণসামগ্রীর দাম কমার অপেক্ষায় আছি। এ ছাড়া যদি ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়া কাজগুলোতে বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি না করে সরকার, তবে কাজ সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব।’
সৈয়দপুর উপজেলা এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী আলী রেজা রাজু আজকের পত্রিকাকে জানান, নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু কিছু নির্মাণকাজে ঠিকাদারদের গতি কমে গেছে। নির্ধারিত সময়ে কিছু কাজ শেষ না হওয়ার কথা আমাদের জানিয়েছের ঠিকাদারেরা। লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলেও জানান তাঁরা। কিন্তু ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গেছে, এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। চুক্তি অনুযায়ী তাঁদের কাজ করে দিতে হবে।