হোম > ছাপা সংস্করণ

জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে নীতি ঘোষণা হবে না?

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আজরা জেয়ার আলোচনায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

তিনি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি ১২ জুলাই বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁর এই সন্তোষ প্রকাশের কথা শুনে রাজনীতিসচেতন মহলের মধ্যে যাঁরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন, তাঁরা স্বস্তি পেয়েছেন।

তবে ১২ জুলাই ঢাকা মহানগরীতে এত সব সভা-সমাবেশের আয়োজন ছিল বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান প্রদর্শনে আজরা জেয়াদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার একধরনের মহড়া। সমাবেশগুলো ওই দিন হওয়ার কোনো পূর্ব সিদ্ধান্ত ছিল না। মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকায় থাকবে—এই সংবাদ জেনেই বিরোধী দলগুলো আকস্মিকভাবে ওই দিন ঢাকার ১৩টি জায়গায় বড় ধরনের শোডাউন করার ঘোষণা দিয়েছিল। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে।

দিনটি ছিল কর্মদিবস। ঢাকা মহানগরীতে ১৪টি উন্মুক্ত রাস্তা ও অ্যাভিনিউতে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ায় যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছিল, তা মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উপলব্ধি করতে পেরেছেন কি না জানি না। ঢাকা শহরে রাস্তায় একটি ছোটখাটো মানববন্ধন করলেও যাত্রীসাধারণ ও বাড়িফেরত মানুষের কী যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়, তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন।

সেখানে দুটি বড় সমাবেশ দেড় কিলোমিটার দূরত্বে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সেই এলাকাগুলোর কর্মজীবন কতটা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, তা বোঝার যেন কেউ নেই। অথচ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ মানুষও যদি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করে, তাতেও মানুষের চলাচলে তেমন কোনো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। ঢাকা শহরের ছোট দলগুলোর জন্য গোলাপবাগ মাঠের মতো আরও অনেক মাঠ রয়েছে। সেখানে তারা জনসভা করতে আদৌ আগ্রহী কি না, বলা মুশকিল।  

ঢাকা শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন যেকোনো জনসভার অভিঘাত গোটা শহরেই কতটা পড়ে, তা সবারই জানা বিষয়। এমনিতেই ঢাকা একটি অতি জনবসতিপূর্ণ মহানগর। এর না আছে পর্যাপ্ত সড়কপথ, না আছে পর্যাপ্ত পরিবহন, ট্রাফিক ব্যবস্থাও নানা চাপে পর্যুদস্ত। ঢাকা শহরে এমনিতেই যাওয়া-আসার কথা ভাবতে অনেকের মধ্যে যানজটের আতঙ্ক বিরাজ করে। তার ওপর যখন রাজনৈতিক দলগুলো সড়ক, রাস্তাঘাটের ওপর কোনো সভা-সমাবেশের ডাক দেয়, তখন গোটা শহরেই যানজট তীব্র আকার ধারণ করে।

মানুষকে হেঁটে জরুরি কাজে যাওয়ার কথা ভাবতে হয়। অসুস্থ রোগী, শিশু, বৃদ্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষের কথা যেন কেউ ভাবতেই চায় না। শুধু ঢাকা এবং বিভাগীয় শহরগুলোই বা কেন, ছোট জেলা ও উপজেলার মতো শহরেও এখন মানুষের উপস্থিতি, কর্মব্যস্ততা, যাতায়াতের দৃশ্য যেকোনো পশ্চিমা দেশের  মানুষকে অবাক করার মতো। আমরা জন্ম থেকেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি, আমাদের যেন কিছুতেই আশ্চর্যান্বিত, অবাক, হতবাক বা বোধে নাড়া দেওয়ার মতো কিছু হয় না। কিন্তু উন্নত দেশ থেকে কেউ এলে তাদের প্রথম কথাই থাকে, তোমাদের শহরগুলোর এত মানুষ রাতে ঘুমায় কোথায়? এটি তাদের কাছে একটি অবিশ্বাস্য জিজ্ঞাসা।

কিন্তু আমাদের মানুষ আগের মতো এখন রাস্তাঘাটে ঘুমায় না। কাজকর্ম সেরে সবাই যার যার গন্তব্যে চলে যায়। তবে অনেক সময় বড় বড় মহানগরীতে গভীর রাতেও যানজট যেন কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না। রাতে শহরে গ্রাম থেকে পণ্যসামগ্রী ও যাত্রী পরিবহন ঢোকে। ফলে রাতেও শহর কোলাহলমুক্ত নয়। এখন মানুষের জীবন বদলে যাচ্ছে। কেউই অলস সময় কাটাচ্ছে না। শহরগুলোই কেবল কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠেনি, প্রত্যন্ত গ্রামে গেলেও হাটবাজারের দৃশ্য শহরের মতোই। বিদ্যুৎ মানুষের জীবনকে কতটা বদলে দিয়েছে, তা অনুধাবন করা প্রয়োজন। গ্রামেও আগের মতো সন্ধ্যা হলে হারিকেন-কুপি জ্বালিয়ে খাওয়াদাওয়া আর ঘুমিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেওয়ার জীবন এখন নেই।

সেখানেও মানুষ টিভি, অনলাইন বা নিজেদের কাজকর্ম সেরে শহরের মতোই ঘুমাতে যায়, সকালে ঘুম থেকে প্রয়োজনমতো ওঠে এবং কাজকর্ম করে। এই পরিবর্তনকে অবশ্যই বাংলাদেশের পরিবর্তনশীলতার বিষয় হিসেবে স্বীকার করতে হবে।  

আগামী নির্বাচন নিয়েও দেশ যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠার অপেক্ষায় আছে, তা সচেতন যে কেউ বুঝতে পারছে। সে কারণেই এখন চলছে শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতি। ১২ জুলাই একটি মহড়া হয়ে যাওয়ার পর ১৮ ও ১৯ জুলাই পরপর দুই দিনও পাল্টাপাল্টি শক্তি প্রদর্শনের উত্তেজনা দেশব্যাপী কমবেশি ছড়িয়েছে। সেটি ঢাকা শহরকে যেমন অচল করে রেখেছিল, অন্য অনেক শহরেই পদযাত্রা, শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের প্রতিযোগিতায় কোথাও কোথাও আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আক্রমণ ইত্যাদি ঘটনাও ঘটেছে। একজনের মৃত্যুও হয়েছে।

স্বভাবতই সেই সব শহরে জনদুর্ভোগ, প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা, হানাহানি, মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। এ বিষয়গুলো পরিহার করা কি একদমই সম্ভব ছিল না? প্রতিটি শহরেই জনসভা করার মতো মাঠ আছে। একই দিনে পাল্টাপাল্টি জনসভাও করা যেতে পারে। সেটি অবশ্যই জনসভার মাঠে করা হলেই জনদুর্ভোগ কোনো শহরেই হওয়ার বা ঘটার কোনো সম্ভাবনা থাকত না। কিন্তু সেই লক্ষণ তো দেখা যাচ্ছে না।

ৎমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিপূর্বে র‍্যাবের কতিপয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের কতটা উপকার করেছে জানি না, তবে তাদের ভিসা নীতি নিয়ে তো অনেকেই বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। ভিসা নীতি ঘোষণার পর সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে সংযত আচরণ ও মন্তব্যের আশাও করা হয়েছিল। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি সেটি প্রত্যক্ষ করতেই হয়তো বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।

তিনি সন্তোষও প্রকাশ করে গেছেন। কিন্তু ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনসভা, শান্তিসভা, পদযাত্রা, শোভাযাত্রা ইত্যাদি জনদুর্ভোগ তো মানুষকে কর্মহীন করে তুলতে পারে। প্রতিটি কর্মসূচির দিন হাজার হাজার মানুষের কাজ যদি বন্ধ হয়ে যায়, অসুস্থ এবং এই মুহূর্তের ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা যদি না থাকে, হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা যদি না থাকে, তাহলে এসব কর্মসূচি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিকেই শুধু স্তব্ধ করে দেবে না, জনজীবনও বিপর্যস্ত করে তুলবে, জনগণের মানবাধিকারও লঙ্ঘিত হবে।

বাংলাদেশ ১৭-১৮ কোটি মানুষের একটি বিশাল জনসংখ্যার দেশ। দেশটা এখন অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনায় অবস্থান করছে। সে জন্যই এখন বিদেশিরা বাংলাদেশকে নিয়ে টানাটানি করছে। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেলে কারও আগ্রহের তালিকায় দেশটা যে থাকবে না, সেটা হয়তো অনেকেই বুঝতে চায় না।

সুতরাং, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ভিসা নীতির মতো ব্যবস্থা জারি করেছে, সেহেতু এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করতে নাগরিক জনজীবনকে যারা দুর্ভোগময় আর বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কি নতুন কোনো প্রেসক্রিপশন তারা জারি করবে? 

লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ