প্রশ্ন: টুর্নামেন্টের শুরুতে বলেছিলেন শিষ্যদের কাছ থেকে খুব বেশি প্রত্যাশা করছেন না। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের তিরন্দাজেরা তিনটি পদক জিতলেন। কোচ হিসেবে আপনি কতটা খুশি?
মার্টিন ফ্রেডরিক: আমি কিন্তু বলিনি যে আমরা পদক জিতব না। বরং টুর্নামেন্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, একটা হলেও পদক জিততে চাই। বলেছিলাম এটাই সময়। কোন ইভেন্ট থেকে পদক জিতব, সেটা বলিনি। একক ইভেন্টের চেয়ে আমরা দল হিসেবে বেশি শক্তিশালী। এর পর কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে যে ফলটা হলো তাতে মুগ্ধ। রিকার্ভ নারী দলীয় ইভেন্ট ও ছেলেদের দলীয় কম্পাউন্ড ইভেন্টে জাতীয় রেকর্ড হলো। ছেলেরা রিকার্ভে দলগতভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর করল। আমি বলব, আমরা ঠিক পথেই আছি। দিনের পর দিন আমরা উন্নতি করছি, আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টে হয়তো সোনা জেতা যায়নি কিন্তু তাতে আমি অখুশিও নই। কোরিয়ার সঙ্গে শেষ সেটটা দারুণ ছিল। যে ফল হয়েছে তাতে আমি সন্তুষ্ট, এ দেশে কাজটাকে উপভোগ করছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের তিরন্দাজেরা প্রায়ই বলেন যে আপনি বসে থাকতে পছন্দ করেন না। সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে কিছু না কিছু করছেন। এই দাঁড়িয়ে থাকার সময়টাতে আপনার মাথায় কী চলতে থাকে?
মার্টিন: জার্মানিতে একটা কথা আছে, ভাগ্যের দিকে চেয়ে পথচলা যায় না। পথে চলতে হলে আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে, যেকোনো প্রতিকূলতার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা কোচরা সব সময় এই বিষয়টা মেনে চলি। একটা উদাহরণ দিই, এই এশিয়ান আর্চারিতে আমি কী করব। সেই পরিকল্পনা আমি দুই সপ্তাহ আগেই ঠিক করে রেখেছি। যেকোনো প্রতিযোগিতার আগে প্রস্তুতি থাকলে তা পরে কাজটা সহজ করে দেয়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের আর্চারিতে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। সবচেয়ে বড় বাধাটা বোধ হয় বিনিয়োগ। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
মার্টিন: ফেডারেশন, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ যথেষ্ট সহায়তা করে। তারপরও বলব, এটা যথেষ্ট নয়। এই খেলাটায় আরও বিনিয়োগের দরকার। অবকাঠামোগত দিক থেকে উন্নতির একটা জায়গা আছে। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সময় আমরা সরকারের কাছ থেকে ভালো সহায়তা পেয়েছি। তবে আমাদের আরও পরিকল্পনা করা দরকার, লক্ষ্য ঠিক করা দরকার। একেকটি বছরে আমরা ঠিক কোন সাফল্যটা চাইছি তা ঠিক করে সব রকম পরিকল্পনা, বাজেট ঠিক করতে হবে।
প্রশ্ন: ২০১৮ সালে আপনার বাংলাদেশ-অধ্যায় শুরুর পর তিরন্দাজদের কোন কোন জায়গায় উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন? আর কোথায় বেশি মনোযোগের প্রয়োজন?
মার্টিন: এদেশে আসার পর আমি প্রথমে যে কাজটা করেছি তা হলো—একটা জাতীয় প্রতিযোগিতার সূচি তৈরি করা। এই সূচি ধরে তিরন্দাজেরা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুত হয়। একজন পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে তিরন্দাজদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আবহটা সবার আগে জানা উচিত। অনুশীলনের মানও আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে এই মানটা আরও ভালো হবে। কোনো জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় হুট করে সব পাল্টে যাবে না।
প্রশ্ন: লম্বা সময় ধরে তিরন্দাজেরা জাতীয় দলের ক্যাম্পে আছেন। এভাবে মাসের পর মাস প্রস্তুতি নিতে কি কোনো মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা তৈরি হয়?
মার্টিন: সবার আগে তিরন্দাজদের তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতেই হবে। সেই জানুয়ারি থেকে তারা একটা দল হয়ে ক্যাম্পে আছে। করোনা পরিস্থিতির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবু চেষ্টা করেছি, তাদের সপ্তাহে একটা দিন ছুটি দিতে। তিরন্দাজেরা এই টুর্নামেন্টের পর লম্বা ছুটি পাচ্ছে। আশা করি, মানসিকভাবে তারা অনেক সতেজ হয়ে ফিরতে পারবে।