জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক পড়াতেন দুটো বিভাগে—রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যক্ষ ড. এম এ আজিজের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় আব্দুর রাজ্জাক স্থির করলেন এই বিভাগে আর পড়াবেন না। ড. আজিজ লিখিতভাবে রাজ্জাক সাহেবকে ক্লাস নিতে অনুরোধ করলেন। যে চিঠিপত্র পাঠিয়েছিলেন, আব্দুর রাজ্জাক সেসব কিছুই খুলেও দেখেননি। ফলে রাজ্জাক স্যারের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে আজিজ সাহেব ভাইস চ্যান্সেলরকে লিখলেন, যেহেতু রাজ্জাক সাহেব তাঁর বিভাগে পড়াতে অনিচ্ছুক, তাঁকে নতুন শিক্ষক দেওয়া হোক। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে কেন তিনি পড়াবেন না, কর্তৃপক্ষ তার কৈফিয়ত দাবি করল এবং জবাব না পেয়ে তাঁকে পদচ্যুত করার জন্য শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে কমিটি গঠন করল।
আব্দুর রাজ্জাক ড. কামাল হোসেনকে বললেন, হাইকোর্টে মামলা করতে। কামাল হোসেন জানালেন, মামলা করতে হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যক্ষ তাঁকে যে চিঠিগুলো দিয়েছিলেন, তা দরকার হবে। কিন্তু চিঠি তিনি পাবেন কোথায়? তখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে গিয়ে ড. আজিজকেই বলতে হলো চিঠিগুলোর কপি দরকার। তিনি যখন জানলেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আব্দুর রাজ্জাক মামলা করবেন, তখন নিজেই টাইপ করে চিঠিগুলো দিলেন।
একটা আপস-নিষ্পত্তি অবশ্য হলো। ঠিক হলো আব্দুর রাজ্জাক পদত্যাগ করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর সব পাওনা মিটিয়ে দেবে। ড. কামাল হোসেন তাঁর জন্য অক্সফোর্ডের বিলিয়ন কলেজে এক বছর থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।
গল্প হলো এর পরেরটুকু।
এক বছর পর আব্দুর রাজ্জাক যখন পাকিস্তান শিপিং করপোরেশনের সৌজন্যে তাদের মালবাহী জাহাজে করে ফিরে এলেন, তখন ড. আনিসুজ্জামানের কাছে এসে বললেন, ‘আমার বইপত্রের একটা বড় সংগ্রহ এসেছে, তা ছাড়াতে হবে।’
মানুষ বিদেশ থেকে আসার সময় ফ্রিজ-টেলিভিশন-মাইক্রোওয়েভ ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী নিয়ে আসে। আবদুর রাজ্জাক এনেছিলেন বই, শুধু বই।
সূত্র: আনিসুজ্জামান জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক স্মারক গ্রন্থ পৃষ্ঠা ১২৮-১২৯