হোম > ছাপা সংস্করণ

দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও প্রতিক্রিয়া

রহমান মৃধা

আমি সুইডেনের গ্রামে থাকি। গত এক বছরে গ্রামের মানুষ এবং পরিবেশের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছি। এখানে ছোট ছোট ভূখণ্ড রয়েছে, যেখানে গ্রীষ্মে টুকটাক শাকসবজি চাষ করা সম্ভব। আমি একজন ল্যান্ডলেডির বড় বাগানবাড়ির একটি অংশ ধার নিয়ে বাগান করা শুরু করেছি।

অন্যান্য কাজের ফাঁকে, সকাল, বিকেল বা সন্ধ্যায় কৃষিকাজের জন্য মাঠে সময় কাটানো—বাংলাদেশের ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। চমৎকার এক অনুভূতি, যা বর্ণনা করা যাবে না। যাঁরা গ্রামের পরিবেশে বড় হয়েছেন, তাঁরা বুঝবেন আমার এই অনুভূতির মূল্য, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।

বাড়ি থেকে মাঠে যেতে সময় লাগে আধা ঘণ্টা। সকালে সুইডেনের গ্রামের পায়ে চলা মেঠোপথ সত্যিই গ্রামবাংলার পরিবেশকে মনে করিয়ে দেয়।

এক সকালে বাড়ির পাশের রাস্তা পেরিয়ে ব্রিজের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি, একটি বিড়াল গাড়িচাপা খেয়ে মরে পড়ে আছে। হঠাৎ থমকে গেলাম, সঙ্গে সঙ্গে বিড়ালটিকে সরিয়ে রাস্তার পাশে রেখে ছোট একটি ভিডিও করলাম। সেটা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মাঠের দিকে রওনা দিলাম। সুইডেনে নিয়ম রয়েছে যে কোনো দুর্ঘটনা দেখলে ট্রাফিক পুলিশকে অবশ্যই জানাতে হবে। জানি না, যিনি কাজটি ঘটিয়েছেন, তিনি জেনে নাকি অজান্তে দুর্ঘটনাটি উপেক্ষা করেছেন! কিছুক্ষণের মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে জানাজানি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিড়ালটিকে সেখান থেকে নিয়ে পরীক্ষা করে মালিকের খোঁজ পায় এবং যথাযথভাবে গ্রামের পাশেই বিড়ালটিকে কবর দেয়।

আমি খেতে লাউ, শিম, লালশাক, পুঁইশাক, মিষ্টিকুমড়া, শসাসহ নানা ধরনের বাংলাদেশি শাকসবজি রোপণ করেছি। শাকসবজি তুলে বাড়ি ফিরলাম। ঘরে ঢুকতেই দরজার ঘণ্টা বেজে উঠল। দরজা খুলে দেখি একগুচ্ছ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন বয়স্ক নারী। মুখটা দেখে মনে হলো বেশ ভারাক্রান্ত। আমি বললাম, ‘হাই, কী খবর, কী মনে করে এ সময় আমার বাসায়?’ ভদ্রমহিলা তাঁর পরিচয় দিলেন, নাম এরিকা। জানলাম, আমার বাড়ি থেকে তাঁর বাসা বেশি দূরে নয়, যদিও এর আগে আমাদের দেখা হয়নি। বিড়ালটি তাঁরই এবং ভুলবশত বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভদ্রমহিলাকে বাড়ির ভেতরে আসার আমন্ত্রণ জানালাম। দুজনে কফি খেতে খেতে নানা বিষয়ে আড্ডা দিলাম কিছুক্ষণ। এরপর এরিকা চলে গেলেন।

বাড়ির পোষা জন্তুর ওপর ভালোবাসা কার না আছে? তবু একটি বিড়ালের অকালমৃত্যু অনেকের হৃদয় ছুঁয়েছে দেখে মনে হলো, মানুষ এখনো দুফোঁটা চোখের জল ফেলে বন্য প্রাণীর জন্য!

দিনটি এভাবেই শেষ হতে পারত। কিন্তু দিনের শেষে দুঃখের বোঝা আরও একটু ভারী হয়ে গেল। ইদানীং প্রায়ই পত্রপত্রিকায় নজরে পড়ে দেশের নানা ধরনের দুর্ঘটনার খবর। যেমন ভৈরবে এক বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৬৫ জনের মৃত্যু, এ বছরে নীলফামারীতে ট্রেনের ধাক্কায় তিন শ্রমিকের ও বগুড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু। যোগ করতে হয় মিরসরাইয়ের রেল দুর্ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যু। সড়কপথে তো প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে। একদম সাম্প্রতিক উদাহরণ, উত্তরায় গার্ডারচাপায় পাঁচজনের মৃত্যু। এত লোকের মৃত্যু হচ্ছে, অথচ তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। ঘটনা ঘটছে, খবর লেখা হচ্ছে, ব্যস হয়ে গেল। এর কী প্রতিরোধ আছে বা কীভাবে কী করলে দুর্ঘটনা কমতে পারে, সে বিষয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কোনো কথা নেই।

জানি, বাংলাদেশে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেই। কিন্তু যখন-তখন, যেখানে-সেখানে, গাড়ির তলে, ট্রেনের তলে পড়ে মরতে হবে, এটা তো হতে পারে না। আমার মনে হয় শুধু রাষ্ট্রের ওপর দোষ চাপিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। একটি বিড়ালের মৃত্যুতে যদি দুফোঁটা চোখের জল পড়তে পারে, কেন একটু অনুভূতি হাজারো মানুষের প্রাণনাশের জন্য হবে না? নইলে তো এভাবেই মরতে থাকবে মানুষ।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ