ফরিদপুরনিবাসী এক ফুফা এসে বাড়ির বাচ্চাদের সিনেমায় নিয়ে যেতে চাইলেন। তাতে পুরো বাড়িতে সাজ সাজ রব পড়ে গেল। সন্জীদারও যাওয়ার কথা। কিন্তু একটি দুঃখজনক কারণে তিনি যেতে পারলেন না।
কারণটা আর কিছুই না, তিনি ইলিশ মাছ খেতে পছন্দ করতেন না। মা সেদিন জেদ ধরলেন, এই ইলিশ মাছই খেতে হবে। সিনেমা দেখার আগ্রহে সেটা কবুল করলেন সন্জীদা, কিন্তু পেটে তা সইল না। মাছ খাওয়ার পর থেকেই শুরু হলো বমি। সে যাত্রায় আর সিনেমা দেখতে যেতে পারেননি।
এরপর এল আরেকটি দিন। বড় বোন যোবায়দা মির্জার বিয়ে হয়ে গেছে তখন। বাড়িতে এসেছেন দুলাভাই। তিনি ঘোড়াগাড়ি বোঝাই করে সবাইকে নিয়ে গেলেন মুকুল সিনেমায়। পরে অবশ্য সেই সিনেমা হলের নাম পরিবর্তন হয়ে আজাদ হয়েছে। সদরঘাটের কোর্ট ভবনের উল্টো দিকে সেটার অবস্থান।
দুলাভাই তো পরম উৎসাহে সবাইকে নিয়ে এসেছেন মুকুল সিনেমায়, কিন্তু দেখা গেল টিকিট নেই। খুবই অপমানিত হলেন দুলাভাই। শালা-শ্যালিকাদের সিনেমা দেখাতে পারছেন না! তিনি তখন জেলখানার কাছাকাছি একটি সিনেমা হলে নিয়ে গেলেন সবাইকে। সেই হলের নাম ছিল তাজমহল। সেখানে চলছিল ‘ফরিয়াদ’ নামে একটি ছবি। সেটাই দেখলেন সবাই মিলে। ছবিটি হিন্দি না উর্দু ছিল, তা আর মনে রাখতে পারেননি সন্জীদা খাতুন। সেটা ১৯৪৫ বা ১৯৪৬ সালের কথা। সন্জীদা খাতুন তখন সেভেনে।
এরপর একবার ‘জীবন মরণ’ নামে একটি ছবি দেখেছিলেন। দুলাভাই এলে আরেকবার সবাই মিলে সে ছবি দেখতে যাওয়া হয়েছিল। ছোট ভাই নুরু ছবি দেখতে দেখতে বলল, ‘পানি খাব।’
দুলাভাই বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করো, পানি আসছে।’
একটু পর সিনেমায় দেখা গেল সায়গল পানি বা সোডা খাচ্ছেন।
দুলাভাই বললেন, ‘ওই তো পানি!’ সে কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।
সূত্র: অনুপম হায়াৎ, পুরানো ঢাকার চলচ্চিত্র, পৃষ্ঠা ৯২-৯২