কাঁকড়া নদীতে ক্ষতিগ্রস্ত রাবার ড্যাম মেরামত না করায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে জমিতে সেচ নিয়ে চিন্তিত এলাকার সহস্রাধিক কৃষক। এতে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন তাঁরা। তবে, শিগগিরই বিষয়টির সমাধান করা হবে জানিয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়িশা সিদ্দিকা আজকের পত্রিকাকে বলেন, মোহনপুর রাবার ড্যামটি সদর উপজেলার মাধ্যমে তত্ত্বাবধান করা হয়। কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনা করে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে।
জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে কৃষকের সেচের সুবিধার্থে সরকার চিরিরবন্দরের সাঁইতাড়ায় কাঁকড়া নদীতে ২০০১ সালে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করে। ২০১৩ সালে মোহনপুরে আরও একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। ফলে শুষ্ক মৌসুমে দুটি রাবার ড্যাম চালু রেখে পানি ধরে রাখার মাধ্যমে আত্রাই ও কাঁকড়া নদীর দুই পাড়ের জমিতে ফসল ফলানো হয়। সম্প্রতি মোহনপুরে রাবার ড্যামের পাইপটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা মেরামত না করায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির সেচ নিয়ে বিপাকে পড়েন কৃষক।
উপজেলার কাঁকড়া নদীর পার্শ্ববর্তী কুশলপুর, খোচনা, পশ্চিম সাঁইতাড়া, দক্ষিণ পলাশবাড়ী, উত্তর ভোলানাথপুর, আন্দারমুহা, অমরপুর, ভিয়াইল, কালীগঞ্জ, তালপুকুর, পুনট্রি, উচিতপুর, তুলসীপুর, নারায়ণপুর ও গোবিন্দপুর গ্রামে দেখা যায়, বোরো মৌসুমে মাঠের পর মাঠ ফসলি জমি পড়ে আছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদী থেকে ঠিকমতো পানি তুলতে পারছেন না কৃষক।
ভিয়াইল ও জয়পুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, পানির অভাবে সেচ দিতে পারছেন না জমিতে। তাই প্রায় ৩০ ফুট লম্বা পাইপ দিয়ে জমিতে পানি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তা না হলে নদীর পাড়ে বিশাল জমি অনাবাদি থেকে যাবে।
অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘আগে নদীতে সব সময় পানি ছিল। কিন্তু দু-তিন বছর বছর ধরে বোরো মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না। কারণ, পানি থাকলে নদী থেকে বালু তুলতে অসুবিধা হয়। বালুমহাল ইজারাদার ও একটি মহল পরস্পর যোগসাজশে আটকানো পানি ভাটিতে ছেড়ে দেয়। আর এতে করে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’ একই কথা জানান ভিয়াইল গ্রামের কৃষক ফজলুল হক।
জয়পুর কাঁকড়া নদীর সেচ পাম্পের পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নদীতে পানি না থাকায় প্রায় ৫০ একর বোরো জমিতে পানি দিতে পারছি না। কৃষকেরা ঘুম হারাম করে দিচ্ছে, নদীতে পানি না থাকলে আমি কেমন করে পানি দেব। আমি বিষয়টি চিরিরবন্দর ইউএনও ও কৃষি কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
ভিয়াইল হালকা সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির খসরু বলেন, ‘কাঁকড়া নদী থেকে পানি তুলে প্রায় এক হাজার একরের একটি কমান্ডিং এরিয়ায় বোরো মৌসুমে পানি সরবরাহ করা হয়। এটা দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প। এবারও আমরা প্রাথমিক অবস্থায় নদীতে যা পানি ছিল, তা দিয়ে প্রায় ৫০০ একর জমিতে পানি দিয়েছি। তখন আমাদের পাম্পগুলো ভালোই চলছিল; কিন্তু বোরো মৌসুমে নদীতে পানি নেই, ফলে পাম্পগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’
মোহনপুর রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইয়াছিন আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব নিয়েছি। এখন দেখতে পাচ্ছি রাবার ড্যামটি ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিদ্যুৎ বিল বাকি আছে। আমরা যোগাযোগ করছি। এখনো কোনো সমাধান পাইনি।’