১৯৪১ সালে জাপানি বোমার কয়েকটি পড়েছিল কলকাতায়। কলকাতা শহর খালি করে বাবু আর মিয়ারা সবাই নিজ নিজ গ্রামে চলে যাচ্ছিল তখন। একটি অফিসে তখন যোগ দিলেন যুবক কামরুল হাসান। বেতন সাকল্যে ৭৫ টাকা। কম নয়। সেই অফিসে একটা ওয়ার্ডেন পোস্ট ছিল। পোস্ট ওয়ার্ডেন ছিলেন মোশাররফ হোসেন। তিনি পদোন্নতি পাওয়ায় তাঁর জায়গায় এলেন ফয়জুল হক।
লম্বা ছিপছিপে কুচকুচে কালো ভদ্রলোকের নাম গোপনে দেওয়া হলো ‘আতার বিচি’। তিনি বেশ ‘চালু মাল’ ছিলেন। নিজেকে তিনি একজন লেখক বলে পরিচয় দিতেন। একবার বললেন, ‘আজ রাতের মধ্যেই ছখানা প্রবন্ধ লিখে তৈরি রাখতে হবে। তাই একটু আগেই অফিস থেকে চলে যাব। আপনারা ঠিকমতো থাকবেন। ডেপুটি চিফ ওয়ার্ডেন ভিজিট করতে পারেন, সাবধান।’
ছয়-ছয়টা প্রবন্ধ লেখার চাপ! কামরুল পরদিন বললেন, ‘কাল ছয়টা প্রবন্ধ লিখতে পেরেছিলেন?’
‘হ্যাঁ। রাত তিনটার মধ্যে সবগুলো লিখে শেষ করা হয়েছিল। প্রবাসী, ভারতবর্ষ, মৃত্তিকা আর…’ কোথায় কোথায় লেখা দেন, তা জিজ্ঞেস করায় এ কথা বললেন তিনি। মৃত্তিকার নাম শুনে একটা প্রশ্ন জাগল কামরুলের মনে। কাজী আফসারউদ্দীন সম্পাদিত দ্বিমাসিক পত্রিকা সেটি। কামরুল বললেন, ‘প্রচ্ছদে মৃত্তিকা লেখাটি সুন্দর। কার করা ডিজাইন?’
‘আতার বিচি’ বললেন, ‘সে মস্ত বড় আর্টিস্ট। শরীফ খাঁ। সাত বছর ইতালিতে শিল্পচর্চা করে সদ্য দেশে এসেছেন।’ ‘ও।’ বললেন কামরুল।
একদিন আফসারউদ্দীনের অফিসে বসে আছেন কামরুল, এ সময় সেখানে এলেন ‘আতার বিচি’। আফসারউদ্দীন ‘আতার বিচি’কে বললেন, ‘চেনেন একে? ওর নাম কামরুল। উঠতি শিল্পী। মৃত্তিকার প্রচ্ছদ ওরই করা।’
কামরুল ভান করলেন, খুব একটা কাজ পড়ে গেছে। দ্রুত বাইরে চলে এলেন তিনি। ইতালি-ফেরত শরীফ খাঁকে ‘আতার বিচি’ এবার কীভাবে সামাল দেবেন, তা ভেবে কামরুলের মনে আমোদ হলো খুব।
সূত্র: কামরুল হাসান, পৃষ্ঠা ১৭৮-১৮০