হজ ব্যক্তিগত আর্থিক ইবাদত। আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ করা হয়। এর আন্তর্জাতিক গুরুত্ব অপরিসীম। হজের সময়টি এমন এক মৌসুম, যার আগমনে গোটা মুসলিম উম্মাহ নতুন প্রত্যয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ফলে লাখ লাখ মানুষ হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে কাবাঘর জিয়ারতে আসেন। লক্ষণীয়, যাঁরা হজে যান তাঁরা তো ধর্মীয় চেতনায় উদ্দীপ্ত থাকেনই; পাশাপাশি তাঁদের আত্মীয়স্বজন, যাঁরা বিদায় দিতে আসেন এবং হজ শেষে স্বাগত জানাতে আসেন, তাঁদের মধ্যেও ধর্মীয় নবচেতনার উন্মেষ ঘটে। একইভাবে, হাজিরা যে রাস্তা দিয়ে যান, সেখানকার লোকজন ‘লাব্বাইক’ ধ্বনি শুনে ধর্মীয় ভাবাবেগে আপ্লুত হয় এবং হজ করার মানসিক প্রস্তুতি শুরু করে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার মানুষ একই রবের ইবাদতের উদ্দেশ্যে একই ঘরকে লক্ষ্য করে একই নিয়মে ঘুরতে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। আল্লাহর বাণী ‘মুমিনেরা পরস্পর ভাই ভাই’ এ কথার বাস্তবায়ন হয়।
হজের মৌসুমে আলেম-ওলামা এবং সুফি ও সংস্কাররা পবিত্র মক্কা ও মদিনায় একত্র হয়ে থাকেন। তাই এ সময় মুসলিম জাতির সঠিক অবস্থা পর্যালোচনা করা, তাদের শিরক-বিদায়াত থেকে মুক্ত করা এবং তাদের মধ্যে দাওয়াতি ও তাবলিগি কাজের পদক্ষেপ নেওয়া যায়। হজ মুসলিম উম্মাহর বিশ্ব সম্মেলন হওয়ায় সব শ্রেণির মানুষ এখানে সমবেত হন। তাই বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যকার মতভেদ ও দ্বন্দ্ব নিরসন করে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় এ সুযোগকে কাজে লাগানো যায়। অনুরূপভাবে হজ মুসলিম জাতির সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাদের শান-শওকতের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। দিকে দিকে তাদের সুখ্যাতি ও গৌরব ছড়িয়ে পড়ে। সব ভেদাভেদ ও মনোমালিন্য ভুলে মুসলিম উম্মাহ যদি হজের আন্তর্জাতিক গুরুত্বকে কাজে লাগায়, তবেই তারা সার্থক।
ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়