ঘটনাটি খুব বেশি দিন আগের নয়। গত বুধবার, ১৩ জুলাই, রাজধানীর হাজারীবাগে নিজ বাসায় একজন সাবেক গণমাধ্যমকর্মী আত্মহত্যা করেন (আজকের পত্রিকা, অনলাইন)। এ ঘটনার ১০ দিন আগে জয়পুরহাটের কালাইয়ে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীর আত্মহত্যার খবরও আমরা পড়েছি সংবাদমাধ্যমে। জুন মাসের ২৯ তারিখে মেহেরপুরের মুজিবনগরে ১৬ বছর বয়সী আর এক কিশোরী আত্মহত্যা করে। কেন সে আত্মহত্যা করেছিল, পরিবারের অন্য সদস্যরা তা বলতে পারেননি।
আত্মহত্যার ঘটনা যেন থামছেই না! চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের নিজ বাসায় ১৮ বছর বয়সী এক পোশাকশ্রমিক এবং রাজধানীর দক্ষিণখানে সাবেক স্বামীর মানসিক নির্যাতনে ৩৫ বছর বয়সী এক নারীও আত্মহত্যা করেন। এর আগে জুন মাসে আরও দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মোট ৮৭ জনের আত্মহত্যার তথ্য উল্লেখ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির গত ১২ বছরের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১০ থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছে মোট ৪ হাজার ১৭৮ জন। এর মধ্যে উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করে ২২১ জন। এ ছাড়া একই সময়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ২১৮ জন। পরিসংখ্যানে আরও জানা যায়, ওই একই সময় অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ঘটনা ঘটে মোট ৩০৮টি।
আত্মহত্যার এসব ঘটনায় আত্মহত্যাকারী নারীরা জাগতিক সবকিছু থেকে মুক্তি পেলেও থমকে যাচ্ছেন তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন। কখনো কখনো এর দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আত্মহত্যাকারীর সন্তানদেরও।
সব মিলিয়ে দেখা যায়, আত্মহত্যার কারণে স্বল্পমেয়াদি হোক বা দীর্ঘমেয়াদি হোক, আত্মহত্যাকারীর পরিবারের প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো ভাবে ভোগান্তির শিকার হয়ে থাকেন। ডা. লেলিন চৌধুরী যোগ করেন, ‘এসব কারণে, যিনি আত্মহত্যা করেন, তিনি একেবারেই মরে যান। কিন্তু পরিবারের বাকি যাঁরা জীবিত থাকেন তাঁদেরও তিনি নানাভাবে বিপদগ্রস্ত করে রেখে যান। এ ছাড়া সামাজিকভাবে পরিবারের এই সদস্যরা মনের অজান্তেই ভাবতে থাকেন, সমাজের লোকেরা তাঁদের কাছে আত্মহত্যার জবাবদিহি চাইছেন—কেন তিনি আত্মহত্যা করলেন? কেন পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বাঁচানো উপায় খুঁজে নিলেন না। এ কারণে বলব, প্রতিটি পরিবারের মধ্যে মানসিক অবস্থার নিরিখে মানবিকতার বিকাশ ঘটানো অনেক বেশি জরুরি।’