বৃষ্টি আর বাতাসে লন্ডভন্ড পুরো বইমেলা!
ঘোষণামঞ্চ থেকে সবাইকে নিরাপদ জায়গায় দাঁড়ানোর আহ্বান ভেসে আসছে বারবার। মেলায় আগতদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে দ্রুতই। হঠাৎ একজন হন্তদন্ত হয়ে এলেন। জানালেন, জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন। বইমেলার ঘোষণামঞ্চ থেকে যদি একটু বলে দেওয়া হয়, তাহলে হয়তো বেঁচে যাবে একটি মুমূর্ষু প্রাণ! সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম ভেবেও সিদ্ধান্ত হলো, ঘোষণা করা হবে জরুরি রক্তের জন্য এই আকুতির কথা। মুহূর্তেই ভেসে এল ঘোষণা, একজন মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন। উল্লেখ করা হলো রক্তের গ্রুপও। পাওয়াও গেল একজন রক্তদাতা।
এ ঘটনাকে ‘কণ্ঠের সার্থকতা’ বলে উল্লেখ করেন আবিদ করিম মুন্না। কয়েক বছর আগের বৃষ্টিমুখর এক বইমেলা প্রাঙ্গণে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৭ সাল থেকে একুশে বইমেলার ঘোষণামঞ্চ থেকে ভেসে আসা কণ্ঠগুলোর মধ্যে একটি আবিদ করিম মুন্নার।
পড়ন্ত বিকেলে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে আবিদ করিমের কাছে জানতে চাইলাম, কতটা পরিবর্তন দেখছেন বইমেলায়? কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর চোখে হয়তো ভেসে ওঠে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত পুরোনো বইমেলাটি। আবিদ জানালেন, যখন বাংলা একাডেমিতে বইমেলা সীমাবদ্ধ ছিল, তখন থেকে কাজ করছেন তিনি। সেই সূত্রে অনেক বিখ্যাত মানুষ, সাহিত্যিক, আলোকচিত্রী ও পণ্ডিতদের পদচারণায় মুখর বইমেলা তিনি দেখেছেন। একসময় মেলায় শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ‘অন্য প্রকাশ’কে বাংলা একাডেমির দিঘির পাড় ঘেঁষে স্টল দেওয়া হতো। কারণ হুমায়ূন আহমেদ আসতেন। তাঁর অগণিত পাঠক প্রতিদিন ভিড় করতেন প্রিয় লেখকের জন্য।
বইমেলায় প্রতিবারই ভিন্ন সজ্জার কিছু স্টল পাঠকদের আকৃষ্ট করে। আর মেলা শেষে স্টলের সজ্জা নিয়েও থাকে বিশেষ পুরস্কার। এ বছর পাঠকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে বেশ কিছু দোকানের সজ্জা। শাহবাগের দিক থেকে মেলায় ঢুকে কিছু দূর গেলেই চোখে পড়বে একটা কুঁড়েঘর। বাঁশ আর চাটাই দিয়ে দেয়াল তোলা সেই ঘরে বিভিন্ন ধরনের বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পাঠক খুব আগ্রহ নিয়ে আসছেন সেখানে। ছবি তুলছেন, বই দেখছেন, কেউ কেউ আবার বই কিনছেনও। এটি আকাশ প্রকাশনীর স্টল। সেখানে দায়িত্বে থাকা রাজিউর রহমান রাজু বলেন, ‘সজ্জার কারণে পাঠকসমাগম হচ্ছে, তবে বিক্রি তেমন হচ্ছে না। কিন্তু পাঠক আসছেন, ঘুরে দেখছেন, এটাতেও আমরা আনন্দিত।’ মূলত গ্রামীণ পরিবেশের আবহ তৈরির জন্যই এমন সজ্জার আয়োজন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রাজু। এবার তাঁদের স্টলে প্রকাশিত নতুন বইয়ের সংখ্যা বেশি।
মেলা থেকে বের হওয়ার পথে আবারও দেখা হয়ে গেল আবিদ করিম মুন্নার সঙ্গে। জানতে চাইলাম, মেলার দোকানসজ্জার পরিবর্তনগুলো কেমন দেখছেন এত বছর ধরে? আবিদ জানালেন, পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন তিনি। বইমেলায় প্রতিবারই ভিন্ন সজ্জার কিছু স্টল পাঠকদের আকৃষ্ট করে। আর মেলা শেষে স্টলের সজ্জা নিয়ে থাকে বিশেষ পুরস্কার। হতে পারে মেলায় আগত অনেকের হাতেই ফেরার সময় বই থাকছে না। তবু দিন শেষে পাঠক ঠিকই বই পড়বেন বলে বিশ্বাস করেন আবিদ করিম। বিশেষ দিনগুলোতে মেলা প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে, এই সমাগম কম কীসে? স্টলগুলো তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে সাজিয়ে গুছিয়ে ক্রেতা টানতে।
এবারের বইমেলার শেষ দিন পর্যন্ত এবং আগামী বইমেলাগুলোতেও হয়তো আমরা শুনতে পাব আবিদ করিমের কণ্ঠ। বইমেলা নিয়ে বাড়বে তাঁর আবেগ, অনুভূতি আর স্মৃতি।