চাঁদপুরে রেলের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. হারুন। সপ্তাহে এক দিন এসে ছয় দিনের উপস্থিতির অগ্রিম স্বাক্ষর করেন। মাস শেষে ঠিকই তুলে নেন পুরো মাসের বেতন। তাঁর অধীনে ১২ জন কর্মচারী আছেন। কয়েকজন ছাড়া বাকিরাও মাসে নামমাত্র দুই-চার দিন কাজ করে পুরো মাসের বেতন তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সুবিধা নেওয়ার জন্য তাঁরা মাসের বেতনের ৩০ শতাংশ টাকা তুলে দেন হারুনের হাতে।
টাকা না দিলে বিভিন্ন অজুহাতে তাঁর অধীনের কর্মচারীদের দূরবর্তী জায়গায় বদলি করা হয়। আজকের পত্রিকার হাতে আসা কয়েকটি অডিও ক্লিপে ঘুষ লেনদেন ও হাজিরা খাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, হারুন ২০২০ সালে জানুয়ারিতে লাকসাম থেকে চাঁদপুরে বদলি হয়ে আসেন। লাকসাম থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ বিদ্যুৎসংক্রান্ত অভিযোগ ছিল। যার ফলে তাঁকে বদলি করা হয়। চাঁদপুরে এসেও তিনি থেমে নেই। তাঁর অধীনে একজন মিটার রিডার, একজন লাইন ইলেকট্রিশিয়ান, দুজন ইলেকট্রিক ফিটার ও আটজন খালাসিসহ মোট বারোজন কর্মচারী আছেন।
অভিযোগ রয়েছে, পাওয়ার সাইডে কোনো লাইনম্যান না থাকায় খালাসি দিয়ে লাইনম্যানের কাজ করানো হয়। হারুন চাঁদপুর যাওয়ার পর মিটার রিডার গ্রেড-২ মালেক, খালাসি জালাল ও খালাসি সেকেন্দারকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তাঁদের কাজ হলো কোনো কর্মচারী যদি কোনো কাজ না করে পুরো মাসের বেতন তুলতে চান, তাহলে তাঁদের কাছ থেকে বেতনের নির্দিষ্ট একটি অংশ আদায় করা। যেমন কেউ যদি ১৫ দিন কাজ করে ৩০ দিনের টাকা তুলতে চান, তাহলে তাঁকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। এই টাকা বুঝে নেন মিটার রিডার আব্দুল মালেক। পরে এই টাকা হারুনের কাছে যায়।
মালেক এক জায়গায় ১৮ বছর চাকরি করছেন। অথচ সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী ৩ বছরের বেশি থাকার নিয়ম নেই। তাঁর সঙ্গে খালাসি জালাল ও সেকেন্দারের চাকরির বয়সও ৮ বছর। তাঁদের অনিয়ম নিয়ে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেন না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁকে বদলি করা হয়।
লাকসাম-চাঁদপুর দপ্তরে ২০০০ সাল থেকে কোনো অফিস সহকারী নেই। মিটার রিডার মালেককে দিয়ে প্রশাসনিক কাজ করানো হয়। হারুন যদিও ডিপ্লোমাধারী কিন্তু কোনো কাজেরই ড্রয়িং জানেন না বলে অভিযোগ। লাকসাম থাকতে ড্রয়িং করাতেন লাইনম্যান সুফিয়ানকে দিয়ে আর এখন চাঁদপুরে খালাসি সেকেন্দারকে দিয়ে করানো হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হারুন নিয়মিত প্রতিদিন অফিস করেন না। সপ্তাহে এক দিন অফিস করে পুরো সপ্তাহের হাজিরা একসঙ্গে স্বাক্ষর করেন তিনি। তাঁর অনুপস্থিতিতে অফিসের যাবতীয় কাজ দেখভাল করেন মিটার রিডার মালেক। হারুনের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে মালেক কর্মচারীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে মাসে মাসে অবৈধ আয় করছেন।
মালেকের কথাবার্তার বেশ কিছু অডিও ক্লিপ আজকের পত্রিকায় হাতে এসেছে। একটি মিটিংয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘রেলের প্রত্যেকটা নাড়ি-নক্ষত্র আমার জানা।
জিএমের সঙ্গে আমার সম্পর্ক, চট্টগ্রামে কাজ ভাগ করে বাবর আলীর (যুবলীগ নেতা) সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। আমাকে বাধা দেবে কে?’
খালাসি হাসান নামে এক কর্মচারী হারুনের সামনে মিটার রিডার মালেকের কাছে ছুটির আবেদন ফরম চাইলে তাঁর কাছে টাকা দাবি করেন মালেক। তাঁর অডিও ক্লিপও আজকের পত্রিকার কাছে সংরক্ষিত আছে।
অভিযোগের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. হারুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় সে জন্য প্রতিদিন উপস্থিত থাকতে পারি না।
তবে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সত্য নয়।’
মিটার রিডার মালেককে টাকা দাবি ও জিএম বাবরের ক্ষমতা দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অডিও ক্লিপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী অজয় কুমার পোদ্দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করা হবে।’