পীরগঞ্জে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে শান ও নলেয়া নদী খননের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলার শানেরহাট ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের লোকজনের দাবি, নদী এলাকায় কয়েক শ মানুষের পৈতৃক ও ক্রয়সূত্রে পাওয়া জমি রয়েছে। এসব জমি কেটে অস্তিত্ব না থাকা নদী বানানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শানেরহাট ও পাঁচগাছীর মধ্য দিয়ে শান ও নলেয়া নদী বয়ে গেছে। নদী দুটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে হাজারো একর জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছিল না। যে কারণে বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ নদী দুটির ১৫ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়।
একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় সপ্তাহখানেক আগে নদী খননের কাজ শুরু করে। এতে নদী এলাকায় চাষাবাদ করা মানুষ আপত্তি তোলেন। একপর্যায়ে এলাকাবাসী তাঁদের জমি রক্ষা তথা ক্ষতিপূরণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খাইরুল ইসলাম গত শুক্রবার তদন্ত করে খননকাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
গতকাল শনিবার এলাকায় গিয়ে কথা হয় ধল্লাকান্দি গ্রামের আবুল হোসেন প্রধান, পাহাড়পুরের রফিক আমিন, পার্বতীপুরের পেয়ারা খাতুন, দামোদরপুরের খোকন মিয়াসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা জানান, ১৯৬২ সালের কাগজপত্র অনুযায়ী তাঁরা জমির মালিক। সেখানে নদী না থাকলেও তাঁদের জমি কেটে নদী করা হচ্ছে।
শানেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবেদ হোসেন খান মাজু বলেন, ‘পার্বতীপুর মৌজার ৬২৮ দাগে শান নদীর নামে খাস জমি রয়েছে। অন্য কোনো মৌজায় নদী বা নালার নামে জমি নেই। আর আমার সাড়ে ৩ বিঘা জমি নদীতে রয়েছে বলে খনন করা হচ্ছে।’
আবেদ হোসেন এলাকারবাসীর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘নদী খননে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।’
তবে দামোদরপুরের অতুল চন্দ্র ও পাহাড়পুরের আব্দুর রশিদ মিয়া জানান, তাঁরা নলেয়া নদী দিয়া নৌকা চলতে দেখেছেন। সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এই নদী দিয়ে নৌকাতে পাট বোঝাই করে নিয়ে গেছেন। অথচ নদী এলাকায় যাঁরা জমি চাষাবাদ করছেন তাঁরা বলছেন, এখানে কোনো দিনই নদী ছিল না।
নদী এলাকায় ৭০০ মিটার খননের কাজ পেয়েছেন ঠিকাদার জাহিদুল ইসলাম রুবেল। তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারেরা কাজ পাওয়ার পর সরকার থেকে জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) দেওয়া হয়েছে। আমাদের খননকাজ বন্ধ করতে আবারও জিও দিতে হবে। না হলে এই কাজ বন্ধ করা যাবে না।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনও স্যারের নির্দেশে আমি বড় পাহাড়পুরে নলেয়া নদী খননকাজ তদন্ত করি। ওই নদীর অস্তিত্ব নিয়ে এলাকাবাসীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকায় অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আমি খনন আপাতত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি।’