শিল্পী সুলতানের প্রথম প্রদর্শনী হয় সিমলায়। সেটা হয়েছিল এক বিদেশি মহিলার উদ্যোগে। ছোটখাটো যেসব ছবি আঁকতেন, সেগুলো বিক্রির জন্য একটা স্টুডিওতে দিয়ে আসতেন সুলতান। বিক্রি হলে টাকা নিয়ে আসতেন। একদিন এক ইংরেজ মহিলা একটা চিরকুট রেখে গেছেন। লিখেছেন তাঁর সঙ্গে যেন সুলতান দেখা করেন।
সেই বয়স্ক মহিলা ছিলেন কানাডিয়ান। নাম মিসেস হাডসন। তিনি সুলতানের পেইন্টিংয়ের ভক্ত। সেই মহিলাই সুলতানের একটি একক প্রদর্শনী আয়োজনের কথা বললেন। গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সিমলায় ছুটি কাটাতে আসেন যখন, তখনই তিনি এই প্রদর্শনীটি করতে চান।
প্রদর্শনীর জন্য সুলতান যে ছবিগুলো এঁকেছিলেন তার সব ছিল ওয়াটার কালার। মূলত ল্যান্ডস্কেপ এবং ওয়ার্কিং পিপল। ওখানকার মহারাজা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন। বেশ কিছু ছবি বিক্রি হয়েছিল। সেই ছবিগুলো আর সুলতানের সংগ্রহে নেই। সেটা ছিল ১৯৪৬ সাল।
যখন দেশ ভাগ হয়ে গেছে, তখন শিল্পী সুলতান ছিলেন শ্রীনগরে। চারদিকে কঠিন অবস্থা। শ্রীনগরে বোম্বিং হচ্ছে। সুলতান শ্রীনগরের একটি হোটেলে ছিলেন, সেখানেই রেখেছিলেন মালপত্র। পাকিস্তানের লোকজন সেখানে অরক্ষিত। পাকিস্তানিদের এই যুদ্ধাবস্থা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটা কনভয় নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সেনাবাহিনী। অবস্থাটা সুখকর ছিল না। কী করবেন ভেবে উঠতে পারেননি সুলতান।
তখনই একটা বড় ভুল করলেন সুলতান। ভাবলেন, যদি হোটেলে গিয়ে ছবিগুলো নিয়ে আসেন তাহলে কনভয় হয়তোবা ছেড়ে চলে যাবে। তাই হোটেলকক্ষ থেকে পেইন্টিংগুলো আর নিজের জিনিসপত্র সঙ্গে নিলেন না। উঠে বসলেন গাড়িতে। শিয়ালকোট হয়ে চলে এলেন লাহোরে। আর ফিরে যেতে পারলেন না। ফলে সেই ছবিগুলোর হদিস আর পাওয়া যায়নি।
সুলতান কিন্তু সেই ছবিগুলোর কথা ভোলেননি। মাঝে মাঝেই ভাবতেন, হয়তো ফিরে পাবেন সেগুলো। কিন্তু সুলতানের প্রথম দিককার কাজগুলো দেখার সৌভাগ্য আর হলো না কারও।
সূত্র: শাহাদুজ্জামান, কথা পরম্পরা, পৃষ্ঠা ১৬-১৭