হোম > ছাপা সংস্করণ

...তব প্রলয়ের শাঁখ

সঙ্গীতা ইমাম

বাঙালির বর্ষবরণ কেবল উৎসব তো নয়, এমনকি শুধু সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও একে বৃত্তাবদ্ধ করা যায় না। ইতিহাসের পথে হেঁটে, বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে এই বর্ষবরণের ইতিহাস এমনভাবে সম্পৃক্ত, যাকে আজ আর আমাদের জীবন থেকে আলাদা করা যাবে না। ফলে বাঙালির ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলোর মধ্যে পয়লা বৈশাখের উদ্‌যাপন একটু ভিন্ন মাত্রার, একটু ভিন্ন আঙ্গিকের। ঐতিহাসিকভাবেই বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন পাশাপাশি হেঁটেছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় দিনগুলোই তার প্রমাণ। স্বাধীন বাংলাদেশেও প্রতিটি ন্যায্য আন্দোলনে সংস্কৃতি থেকে সাহস নিয়েছে মানুষ। এ কারণেই মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ বা ধর্মীয় উগ্রবাদ বারবার বাংলার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ওপর আঘাত হেনেছে। বাঙালির সংস্কৃতিবোধকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছে। কূপমণ্ডূকতা আর কুতর্ক দিয়ে ম্লান করতে চেয়েছে আমাদের সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোর বর্ণময়তা আর বৈচিত্র্যময়তাকে।

সংস্কৃতির ওপর মৌলবাদের এই নগ্ন হামলার প্রকাশ্য শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে। এর দুই বছর পর ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল বোমা হামলা করা হয় বাংলা ১৪০৮ সালে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। নয়জন সংস্কৃতিকর্মী ও দর্শক প্রাণ হারিয়েছিলেন এই হামলায়।

সাংস্কৃতিক উৎসবে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলার মূল উদ্দেশ্যই থাকে মানুষকে ভীত করে তোলা। কিন্তু ১৪০৮ সালের বর্ষবরণ সাক্ষী, মানুষ জীবন দিয়েছিলেন কিন্তু ভয় পাননি। ১৪০৯ সালের ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ এসেছিলেন রমনায়, অংশ নিয়েছিলেন মঙ্গল শোভাযাত্রায়। কুড়ি বছর ধরে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলো পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন নিয়ে ক্রমাগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে এসেছে। আজও ছড়ায়। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় নানা বিধিনিষেধ। উদ্‌যাপনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া থেকে শুরু করে নানা রকম কড়াকড়ি—এ যেন আমার উৎসবে আমিই আগন্তুক! সরকার হয়তো নিরাপত্তার কথা বলবে, কিন্তু সঠিক সময়ে বিচার হওয়াটাও কি নিরাপত্তা নিশ্চিতের একটি অন্যতম শর্ত নয়? রমনার বটমূলে সেদিন যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের স্মৃতিটুকু কি ফিরে আসে না প্রতিটি পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনে? যতবার আমরা ছায়ানটের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাই, ‘তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক...’, আমরা তো প্রার্থনা করি মুক্তির। সেই মুক্তি কেবল অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলালেই মেলে না, এর জন্য প্রয়োজন গ্লানিমুক্ত হওয়া। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে সংস্কৃতির ওপর যে নৃশংস বর্বরতা নেমে এসেছিল ১৪০৮ বাংলা বছরটি বরণের আয়োজনে, আজও তার বিচার করা গেল না। এ গ্লানি থেকে আমরা আজও মুক্ত হতে পারিনি।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের নানা মাত্রিক পরিবর্তন এসেছে। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে সময়ের নিয়মেই বদল ঘটেছে। কিন্তু যে সাংস্কৃতিক বোধ আমাদের আত্মপরিচয়টি নির্মাণ করেছে, তার যত্ন আমরা নিচ্ছি কি? দিন যত যাচ্ছে, এ প্রশ্নটিই যেন বারবার করে মনে উঠে আসছে। গোটা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বীভৎস চেহারা আমরা দেখেছি। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের নৃশংসতা আমাদের আজও দেখতে হয়। নানা ধরনের মেগা প্রকল্পের দেশে একজন বিজ্ঞানের শিক্ষককে কারাবাস করতে হয় কেবল যুক্তি তুলে ধরেছিলেন বলে। লেখার জন্য জীবন দিতে হয় হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায়সহ কয়েকজনকে।

আমাদের মননে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, আমাদের চিন্তায় যে অসুস্থতা দেখা যাচ্ছে, তার চিকিৎসা করতে হলে সংস্কৃতির কাছেই ফিরে যেতে হবে। আর এই ফিরে যাওয়ার তাগিদ সবচেয়ে বেশি থাকতে হবে সরকার আর সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই। কারণ সাধারণ মানুষ বারবার উৎসবের আবিরে সাহস যুক্ত করেছে, তারা প্রমাণ করেছে কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির রক্তচক্ষুকেই ভয় পায় না। রমনার বটমূলে বোমা হামলার বিচার হয়নি আজও কিন্তু মানুষ রমনার বটমূল কিন্তু ছাড়েনি। আজও বসন্তের উৎসবে গোটা ঢাকা শহর বর্ণিল হয়ে ওঠে। পয়লা বৈশাখে মানুষ সেজে ওঠে রসের আবেশ রাশি নিয়ে। সুতরাং, বাকি কাজটুকু সরকারের তরফ থেকেই হওয়া উচিত। রমনার বটমূলে বোমা হামলার সঠিক বিচারের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থেই গ্লানিমুক্ত করা উচিত আমাদের প্রাণের আয়োজনকে। নিরাপত্তার নামে সময়সীমা বেঁধে নয়, মানুষকে সঙ্গে নিয়েই হওয়া উচিত অবারিত আয়োজন।

সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে এই বাংলার মানুষ কোনো দিন ভয় পায়নি। চিরকাল গানে-আবৃত্তিতে-নৃত্যে-ছন্দে মানবিক মানুষ মোকাবিলা করেছে দানবিক সাম্প্রদায়িকতাকে। হত্যা করে ধ্বংসলীলা চালিয়ে মৌলবাদ যতবার মানুষের মনে ভয় ধরাতে চেয়েছে, মানুষ ততবারই চূড়ান্ত সাহসে জেগে উঠেছে। এটাই বাংলার ইতিহাস। এই ইতিহাসে চোখ রেখেই তারা অগ্নি স্নানে নিজেদের পবিত্র করে এসেছে চিরকাল। শুভ নববর্ষ।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ