চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারী বাজার এলাকা। গত সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে ছিল মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। শীতের কারণে জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ ঘর থেকে তেমন বের হয়নি। তবে যারা বের হয়েছিল, তাদের অধিকাংশের মুখে ছিল না মাস্ক।
গতকাল বুধবারও এই চিত্র দেখা যায়। দেখা গেছে, অনেকের মাস্ক ছিল থুতনিতে। ফুটপাতের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছিলেন কেউ কেউ। স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না।
আবার প্রতিটি বাসেই ছিল যাত্রীদের গাদাগাদি। অধিকাংশ যাত্রীর মুখে মাস্ক ছিল না। মাস্ক ছাড়া যাত্রীরা বাসে উঠলেও চালক ও সহযোগীদের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। দেখা যায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১৩ জানুয়ারি থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। এ ছাড়া ২১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ নতুন ছয়টি নির্দেশনা দেওয়া হলেও হাটহাজারীর বিভিন্ন স্থানে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমাবেশ এবং অনুষ্ঠান চলছে বাধাহীনভাবে। এসব অনুষ্ঠানে যারা যোগদান করবে, তাদের করোনার টিকার সনদ অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করা পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ সনদ থাকার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা ও করোনার ফোকাল পারসন তাহনিয়া সাবেরা চৌধুরী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলার ৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫১ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার প্রায় ৪৩ শতাংশ। এর আগের দিন ৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, যা চট্টগ্রামের অন্য উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। এই অবস্থা চলতে থাকলে সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। শুধু কাগজে-কলমে বিধিনিষেধ দিয়ে হবে না। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ না থাকলে কোনোভাবেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা না নিলে করোনা বাড়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সোহানিয়া আক্তার বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কোনো রকম অবহেলা করা যাবে না। তা না হলে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করবে, যা নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ রোধে হাটবাজারে মাইকিং ও জনসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার প্রদত্ত বিধিনিষেধ মানার ব্যাপারে আমরা খুব সতর্ক অবস্থায় আছি। তারপরও যদি বিধিনিষেধ মানার ব্যাপারে পরিবহন ও হাটবাজারে জনসাধারণের মধ্যে অনীহা দেখা দেয়, তাহলে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব।’