হোম > ছাপা সংস্করণ

আজব সময়

নাফিসা চৌধুরী

আমাদের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। প্রবীণরা বলেন তাঁদের সময় ভালো ছিল। আমরা অনেকে বলি শৈশব, বাল্যকালই ভালো ছিল। কিন্তু আমাদের এই সময়ে কোথায় যেন গোলমাল লেগে গেল।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিজ্ঞানের এত সব আবিষ্কার হলো যে তার সঙ্গে পায়ে পা রেখে চলা কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাল মিলিয়ে চলা যাচ্ছিল না। সর্বসাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করে সে সময় থেকেই। মনে আছে, টেলিভিশন যখন ঘরে ঘরে জায়গা করে নিচ্ছে, তখন ওয়াজে বলতে শুনেছি ‘এসব বিদআত! কিয়ামত সন্নিকটে…ইত্যাদি ইত্যাদি।’ অথচ এর কিছু বছর পরেই দেখলাম ধর্মপ্রচার ও আলোচনার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠল এই ‘বিদআতি’ টেলিভিশন।

আমরাই সেই শতকের মানুষ, যাঁদের মা-খালারা এমনকি দাদি-নানিরাও কখনো হিজাব পরেননি, অথচ তাঁরা মনে-প্রাণে ধার্মিক ছিলেন। মা-খালাদের সব পুরোনো ছবিতে দেখি শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফ্রক, লেহেঙ্গা, জিনস, টি-শার্ট সব ধরনের পোশাকই নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পরতেন। অথচ এখন সবাই আর সবকিছু কেমন যেন অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পছন্দের পোশাক নির্বাচনে পরিবারের এই মানুষদের কাছ থেকেই বাধা পাচ্ছি।

২০০০ সালের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। ১৯৯৯ সালের সমাপ্তিলগ্ন! সবার মাঝে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ। আমি অনেক ছোট, আমরা ছোটরা সবাই বেশ আনন্দেই ছিলাম মিরপুরের একটা মহল্লায়। কিন্তু সেখানেও কী যেন হলো, মুখে মুখে খবর রটে গেল ২০০০ সালে কেয়ামত হবে, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ কথা এমনভাবে সবার মগজে ঢুকেছিল আর এমনভাবেই এই আলোচনা হচ্ছিল যে আমাদের মহল্লার সবাই ভয় পেয়ে গেল। আর সেই ভয়ের কারণে একেকজন একেক কাজ করতে শুরু করল। কেউ সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা বাড়িয়ে দিল, কেউ পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়া শুরু করল, কেউ ভাবতে লাগল মৃত্যুর আগে কী করে যেতে চায়, আরও কত অদ্ভুত কাজকর্ম! শেষে কেউ একজন মিষ্টিও খাইয়েছিল সবাইকে এই ভেবে যে ‘যদি মরেই যাই, তাই শেষবার খেয়ে নিলাম’।

এ কথা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়, আবার দুঃখও লাগে। ২০২২ সালে এসেও আমরা কোনো এক গন্ডগোলে আটকে গেছি, যা আমাদের মস্তিষ্ককে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে দিচ্ছে না। তাই হয়তো অনেকে নিজেদের এখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় যুক্ত করেন, ধর্মীয় পীঠস্থানে হামলা চালিয়ে মনের স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত করেন।

অথচ সবুজ এই বাংলাদেশ একসময় ছিল সরল-সোজা মানুষের আবাসস্থল। যাদের মনে কেবলই সরলতা আর মায়া, মমতা, ভালোবাসার অদ্ভুত মিশ্রণ ছিল। সুন্দর ছবির মতো এই দেশটায় যেখানে তরুণদের মনে লালিত হওয়ার কথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণের মনে ভর করে নিয়েছে ধর্মান্ধতা। আর এই ধর্মান্ধতা দিন দিন প্রকট মহামারির রূপ ধারণ করছে।

মাত্র ৫০ বছর আগে এই দেশটার জন্ম। এই অল্প সময়ে দেশের মানুষেরাই তো এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই যে সবকিছুর মাঝে কী একটা গন্ডগোল লেগে গেছে! আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা কেমন যেন মুষড়ে পড়েছে, সাম্যের গান গাইছে না সবাই। এই গোলমাল থেকে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে চলেছি। আমরা যে বাঙালি, যেখানে নানান বর্ণের, ধর্মের, গোত্রের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করছি। আমাদের নিজেদের এই পরিচয় নিয়ে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই হয়তো আবার সেই সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব, যেখানে নিশ্চিন্তে আমাদের মন চিরনিদ্রায় শায়িত হতে চায়, আমৃত্যু এই মাটির কোলে থাকতে চায়।

 লেখক: সংস্কৃতিকর্মী

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ