হঠাৎ করেই সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিএনপির মেয়র হয়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীকে সংবর্ধনার পেছনে অন্য গন্ধ পাচ্ছেন সিলেটের সাধারণ নাগরিক, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। তাঁরা বলছেন, সরকারি মহলের সঙ্গে দহরম-মহরম বজায় রাখতে এবং মেয়র হওয়ার পথ সুগম করতেই এই সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের খবর আসার পরই এই বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় নগরবাসীর মধ্যে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্বাচন এখনো দুই বছরের বেশি সময় বাকি। তারপরও আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের নিয়ে একটু আগেভাগেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এখন থেকে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানসহ সভা, সেমিনারে নিজেদের সরব উপস্থিতির মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন সিটি নির্বাচনে প্রার্থিতার; বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুর পর বেশ কয়েকজন নতুন প্রার্থী নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাই এই মুহূর্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মেয়রের এই সংবর্ধনার উদ্দেশ্য নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এই সংবর্ধনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিসিক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতারাও।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিয়ে সিটি মেয়র আরিফুল হক সরকারি আইন ভঙ্গ করেছেন বলে মনে করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও বর্তমান কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী (কয়েস লোদী)। সিলেট নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কও তিনি। আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে পরপর তিনবার নির্বাচিত এই কাউন্সিলর বলেন, এই ধরনের সংবর্ধনা দেওয়ার আগে তা সিটি করপোরেশনে নিয়মিত মাসিক বৈঠকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়, কিন্তু আমার জানামতে তা করা হয়নি। এ কারণে বলা চলে, এই সংবর্ধনা সিটি করপোরেশনের নয়, মেয়র আরিফের ব্যক্তিগত সংবর্ধনা। বিএনপি নেতা হওয়া সত্ত্বেও আরিফুল হক সরকারি মহলের সঙ্গে দহরম-মহরম বজায় রাখার ধারাবাহিকতাই এই সংবর্ধনা বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংবর্ধনা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দীন আহমদ। আজকের পত্রিকাকে দেওয়া তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় গত রাতে তিনি বলেন, বিএনপির নেতা মেয়র আরিফুল হক সম্প্রতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নানা আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এ ক্ষোভ থেকে বাঁচার জন্য তড়িঘড়ি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়ে থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ তাঁর ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য বারবার দাবি জানালেও তিনি তা করছেন না।
বুধবার দুপুরে সিলেট রেজিস্টারি মাঠে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এদিকে সিলেট সিটি মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জন করেন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। বিএনপিরও শীর্ষ নেতাদের কাউকে সংবর্ধনা মঞ্চে দেখা যায়নি।
করপোরেশন আইন ভঙ্গ করেছেন মেয়র
তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতা হওয়া সত্ত্বেও আরিফুল হক সরকারি মহলের সঙ্গে দহরম-মহরম বজায় রাখার ধারাবাহিকতাই এই সংবর্ধনা। কী কারণে এই সংবর্ধনা, সেটাও স্পষ্ট করা হয়নি কোথাও। তাই মনে করা হয়, এই সংবর্ধনার মাধ্যমে আরিফুল হক বছরের সেরা চমক দেখিয়েছেন।
কোনো কারণ ছাড়া সংবর্ধনা রহস্যজনক
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য বারবার দাবি জানালেও তিনি তা করছেন না। এ ছাড়া পানির দাম ১৫০ থেকে ২০০ গুণ বাড়ানোসহ নানা কারণে নগরবাসীও তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। নগরবাসীকে নিজের ক্ষমতা দেখাতে সিসিক মেয়র এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনের করতে পারেন হলেও মত আসাদের।