তিস্তা নদীর ফ্লাড বাইপাস সড়ক বন্যায় ভেঙে যাওয়ার তিন মাস পেরোলেও সংস্কার হয়নি। ফলে আসন্ন বন্যা মোকাবিলা নিয়ে উৎকণ্ঠায় তিস্তা নদীর বাম তীরের মানুষ।
ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিস্তা নদী; যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। এর দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ১২৫ কিলোমিটার।
ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় শীত মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষায় অতিরিক্ত পানিপ্রবাহের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তিস্তার বাম তীরের জেলা লালমনিরহাট।
তিস্তা নদীর পানি সেচকাজে ব্যবহার করতে আশির দশকে তৎকালীন সরকার লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার সংযোগে তিস্তা নদীর ওপর তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে, যা লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলাকে সংযুক্ত করেছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে বাম তীরে লালমনিরহাট অংশে ফ্লাড বাইপাস নির্মাণ করা হয়। অতিরিক্ত পানি যাতে ফ্লাড বাইপাস দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্যারাজ রক্ষা পায়। এই ফ্লাড বাইপাসের ভাটিতে নির্মিত হয় হাজারো বসতবাড়ি ও স্থাপনা।
গত বছর ২০ অক্টোবর অসময়ে হঠাৎ তিস্তার পানিপ্রবাহ বেড়ে যায়। ওই দিন তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস ভেঙে বাম তীরে বন্যার সৃষ্টি হয়। ভেসে যায় ঘরবাড়ি, ভেঙে যায় রাস্তাঘাট। বন্যার তিন মাস অতিবাহিত হলেও ভেঙে যাওয়া ফ্লাড বাইপাস সংস্কার করা হয়নি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুই জেলার মানুষ।
অপরদিকে আসন্ন বন্যায় আবারও বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা করছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। বন্যার আগে সংস্কার না হলে তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ব্যারাজ কোনো কাজে না আসার আশঙ্কা স্থানীয়দের।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারীর বাসিন্দা সোলায়মান আলী খোকন বলেন, ‘গত বন্যায় ফ্লাড বাইপাস ভেঙে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে, এখনো সংস্কার করা হয়নি। আগামী বন্যার আগে সংস্কার না হলে বিপদ হতে পারে। এ ছাড়া বন্যার আগে সংস্কার না হলে নদীর গতিপথও পরিবর্তন হতে পারে। এমন হলে তিস্তা ব্যারাজ শূন্যে পড়ে থাকবে।’ তাই দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লাড বাইপাস সংস্কার করতে ৩০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে সংস্কার করা হবে।