হোম > ছাপা সংস্করণ

হলুদ সাংবাদিকতা

সাইমুম জান্নাত

ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি সাংবাদিকতা মহৎ পেশা। স্বাভাবিকভাবে তখন থেকেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত সবকিছুর প্রতি আলাদা উৎসাহ ছিল।

এখন বড় হয়েছি। সৌভাগ্য হয়েছে অনেক কিছু দেখার, শোনার, জানার। অনেক কিছু দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতে এবং আসল সত্য জানতে জানতে অনুভূতি কিছুটা ভোঁতা হয়ে গেছে বলা যায়।

এখন তাই বেশির ভাগ ঘটনার সত্যিটা জেনেও সব সময় তা ঢাক পিটিয়ে সবাইকে জানাতে ইচ্ছা করে না। চারপাশটা ‘নানা মানুষের নানান মত’ এমনভাবেই চলছে। যুক্তি ও সত্যতা সেখানে তেমন কোনো ব্যাপার নয়। জীবন, জীবিকা, ব্যস্ততা কিংবা বিরক্তির কারণে সবাইকে আর ধরে ধরে জানাতে বা বোঝাতেও ইচ্ছে করে না কোনো কিছু।

অনেক দিন পর মনে হচ্ছে সব সময় চুপ করে থাকা ঠিক নয়। তাই আজ সে কাজটাই করতে বসেছি। দায়বদ্ধতা সব সময় এড়ানো যায় না।

গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখে পড়ল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যয়নরত দু-একজন অনুজের ফেসবুক পোস্ট। তারা এমন ছবি পোস্ট করেছে, যেখানে বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা আহমেদ বটতলায় তাঁদের ক্লাস নিচ্ছেন।

মহানন্দে সবাই সেখানে জড়ো হয়ে ক্লাসে অংশ নিয়েছে।

ছবির সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যা লিখেছে, তার সারমর্ম হলো তাহমিনা ম্যাম উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের ‘কিং লিয়র’ পড়াচ্ছিলেন এবং প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার মধ্যে মানুষ কীভাবে নিজের বাস্তব রূপের সঙ্গে পরিচিত হয়, সেটা যাতে আরও ভালোভাবে অনুধাবন করা যায়, তাই শিক্ষার্থীদের নিয়ে কলাভবনের সামনে বটতলায় ক্লাসটি নিচ্ছিলেন।

বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে স্বভাবতই ছবিগুলো এবং আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক তাহমিনা আহমেদকে দেখে অনেক বেশি ভালো লাগল।

সত্যি কথা বলতে কি, এই ছবি এবং গাছতলায় ক্লাস নেওয়ার ঘটনা আমার কাছে কোনোভাবেই অস্বাভাবিক মনে হয়নি। যেহেতু সৌভাগ্যবশত একসময় আমিও ওই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম এবং তাহমিনা ম্যামকে আমার শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম, সেহেতু আমি জানি এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।

এটুকু না বললেই নয়, মায়ের মতো, বন্ধুর মতো আগলে রাখতেন যিনি, তিনি তাহমিনা আহমেদ। যা-ই হোক, সেসব স্মৃতিচারণায় আর যাচ্ছি না!

ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত, কিন্তু না। পরদিন দেখলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ এবং আমার তৎকালীন সহপাঠী নিউজফিডে তাহমিনা ম্যামকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি জাতীয় দৈনিকের একটি খবর শেয়ার করেছেন, যার শিরোনাম ‘শ্রেণিকক্ষে লোডশেডিং, গাছের নিচে ক্লাস নিল ঢাবি প্রফেসর’।

অনুজ শিক্ষার্থীদের পোস্ট পড়ে যে আনন্দ পেয়েছিলাম, তা নিমেষে উধাও হয়ে গেল। অবাক হলাম। যা ঘটেনি, এমন একটি শিরোনাম!

কিছুক্ষণের মধ্যে দেখলাম, বটতলার ক্লাসে উপস্থিত ছিল এ রকম এক শিক্ষার্থী এই সংবাদের প্রতিবাদ করে লিখেছে, এটা হলুদ সাংবাদিকতা। একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা কী করে এমন দায়িত্বহীন সংবাদ প্রকাশ করে!

এড়িয়ে যেতে গিয়েও কেন যেন ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যেতে পারলাম না। ওই দিন বটতলার ক্লাসে

উপস্থিত শিক্ষার্থী তাসনিম জারিন রাইসার সঙ্গে কথা বললাম। জানতে চাইলাম সত্যিই কী ঘটেছিল।

সে জানাল, ‘ম্যাম কিং লিয়রের “স্টর্ম” বা ঝড় দৃশ্যটি পড়াচ্ছিলেন। প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার

মধ্যে মানুষ কীভাবে নিজের বাস্তবরূপের সঙ্গে পরিচিত হয়, সেটা যেন আমরা আরও

ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারি, তাই তিনি আমাদের বটতলায় নিয়ে যান। আর আমরা ১২ ব্যাচের সব শিক্ষার্থী বিষয়টাকে খুব এনজয় করেছি। তিনি (তাহমিনা আহমেদ) লোডশেডিংয়ের বিষয়ে কিছু জানতেন না। আর যদি কোনো স্টুডেন্ট তাঁকে লোডশেডিংয়ের বিষয়ে জানিয়েও থাকে, তাহলেও তিনি লোডশেডিংয়ের জন্য বটতলায় ক্লাস করাননি।’ সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের পর একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে মনটা বেশ খারাপই হলো। গণমাধ্যম তো আসলেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সবাই একে বিশ্বাস করে, অন্ধবিশ্বাস যাকে বলে। গণমাধ্যমের শক্তি অনেক। সেই শক্তিটার সত্য এবং সঠিক ব্যবহার করা চাই। সেটাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপব্যবহার করা সমাজ, মানুষ, দেশ, আপনার এবং আমাদের জন্য আসল

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ