সারা দেশে বিভাগীয় সমাবেশসহ অনেক কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে বিরোধী দল বিএনপির একটি শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। এক বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনী প্রস্তুতির বছরে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনৈতিকভাবে দৃশ্যত নিষ্ক্রিয়। দলের মহাসচিবসহ অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়ে জেলে। বহু নেতা-কর্মীকে নিয়মিত মামলায় হাজিরা দিতে হচ্ছে আদালতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ২০২৪ সালের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন হবে। কাজেই নির্বাচনের আগের বছরটা ক্ষমতাসীনেরা বিরোধীদের কোনো সুযোগ দিতে চাইবে না। আগেরবারের মতো এবারও মামলা-গ্রেপ্তার জোরদার করে নাজেহাল করার চেষ্টা করতে পারে। এগুলো সামলে তারা যদি আন্দোলনের গতি ধরে রাখতে পারে, তাহলে লক্ষ্য পূরণ হতে পারে।
বিএনপির লক্ষ্যপূরণের পথে ক্ষমতাসীনদের শক্ত অবস্থানসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জকে সামনে এনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেউ সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। বর্তমান ক্ষমতাসীনেরাও ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। বিএনপিকে লক্ষ্য পূরণে অবশ্যই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’
এর বাইরে বিএনপির ঘোষিত রূপরেখায় চেনা বিএনপির বাইরে প্রগতিশীল অন্য এক বিএনপিকে পাওয়া গেছে, এমন বিবেচনায় শান্তনু মজুমদার বলেন, এই বিষয়টিও বিএনপির ভোটব্যাংকে প্রভাব ফেলতে পারে, যা দলটির লক্ষ্যপূরণের পথে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
লাগাতার অবরোধসহ নানা চেষ্টা করেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি বিএনপি। পরেরবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেরা অংশ নিয়েও সুবিধা করতে পারেনি। এ সময়ে রাজপথে দাঁড়াতে না পারা দলটি সরকার পতন ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে রাজধানীসহ জেলা-উপজেলা, মহানগরে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে এগোতে থাকে। দলটি টানা ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে। তবে গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনের সংঘর্ষের ঘটনায় বড় হোঁচট খেতে হয় বিএনপিকে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কিছু দায়িত্বশীল নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলটিতে দেখা দিয়েছ মন্থর গতি। এর পেছনে মহাসচিবের অনুপস্থিতির পাশাপাশি গ্রেপ্তার ও মামলা-হামলার আতঙ্ককে দায়ী করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
কেবল মহাসচিবের বিরুদ্ধেই করা হয়েছে ৯২টি মামলা। বিএনপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে সারা দেশে প্রায় ১ লাখ মামলা হয়েছে দলের ৩৭ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মনে করেন, লক্ষ্যপূরণে বিএনপির সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলা-হামলা, গ্রেপ্তারসহ নানাভাবে নেতা-কর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে। দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করে রাখা হয়েছে। জামিন দেওয়া হচ্ছে না।
বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ্ প্রিন্স বলেন, গ্রেপ্তার ও মামলা-হামলার আতঙ্ক ছড়িয়ে বিএনপির ওপর চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা চলছে। তবে এসব চাপ উপেক্ষা করে দল নিজস্ব কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে।
গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা ঘোষণা করে বিএনপি। পরে ২৭ দফা রূপরেখা প্রকাশ করে দলটি। ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল হয়েছে। ১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
আগামী দিনের কর্মসূচির বিষয়ে দলটির দপ্তর থেকে জানা যায়, কর্মসূচি নির্ধারণে তৃণমূল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায় থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে। এসব মতামতের আলোকে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। এরই মধ্যে যেসব কর্মসূচি পালনের প্রস্তাব এসেছে, তার মধ্যে রোডমার্চ, পদযাত্রা, মানবঢাল, ঘেরাও উল্লেখযোগ্য। এসব বিষয়ে দলের হাইকমান্ড আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
গণ-অবস্থানের পরে কী কর্মসূচি আসবে, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, গণ-অবস্থানের কর্মসূচি থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে কী কর্মসূচি আসবে, সেটা এখনো ঠিক করা হয়নি।’