মিঠাপুকুরের প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোতে কারেন্ট জালের পর এখন দিন দিন বাড়ছে চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার। রিং আকৃতির ফাঁদ জাতীয় এ জাল মাছের রেণু থেকে শুরু করে সব ধরনের জলজ প্রাণী ছেঁকে ধরে ফেলছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে বেশি দিন লাগবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাছের জন্য ক্ষতিকর কারেন্ট জাল ব্যবহার বন্ধে কর্তৃপক্ষ অভিযান পরিচালনা করায় মাছ শিকারিরা এখন চায়না দুয়ারি রিং জাল ব্যবহার করছেন। যার ফলে এখন দেশি প্রজাতির মাছ বংশ বিস্তার করতে পারছে না। কারণ ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরা পড়ার পাশাপাশি পোনাও আটকে যাচ্ছে।
উপজেলার বালুয়ামাসিমপুর এলাকার বাসিন্দা শামছুল ইসলাম জানান, ভেলোয়ার বিল ও যমুনেশ্বরী নদীতে সবচেয়ে বেশি চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি মাছের দাম বেশি হওয়া এক শ্রেণির শিকারি অধিক মুনাফার আশায় এই জাল ব্যবহার করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বলেন, তাঁরা চায়না দুয়ারি রিং জালকে শয়তান জাল নাম দিয়েছেন। কেননা এ জালে রেণু পোনা ঢুকলেও আর বের হতে পারে না।
উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আইয়ুব আলী জানান, চায়না দুয়ারি রিং জাল কারেন্ট জালের চেয়েও ক্ষতিকর। কারণ এ জালের দৈর্ঘ্য হয় ৫০ থেকে ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ এক থেকে দেড় ফুট হয়ে থাকে। জালে সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে ঘন ফাঁস থাকায় যেকোনো আকারের মাছ ভেতরে ঢুকলে বের হতে পারে না। শুধু মাছ নয়, অন্যান্য জলজ প্রাণীও মারা যায়।
চায়না দুয়ারি জাল এ দেশে তৈরি হয় না, চীন থেকে আমদানি করা হয় বলে জানান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আগে নদী এলাকায় এ জালের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। এখন গ্রামের জলাশয়েও ব্যবহার বাড়ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ জাল এক ধরনের মাছ শিকারের ফাঁদ। গোলাকার বা বর্গাকৃতির আকারে জালটি জলাশয়ের নিচে বসানো যায়। এতে মাছ ঢুকলে আর বের হতে পারে না।’
জালটির ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাছের জন্য ক্ষতিকর চায়না দুয়ারি রিং জাল ব্যবহার বন্ধ করা হবে। প্রয়োজন হলে ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।