১৯৭০-র দশকে বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় ৪৮ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে ‘রুপাতলী হাউজিং এস্টেট’। সেখানকার আড়াই শ প্লটে স্থাপন করা হয়েছে অনেক বহুতল ভবন। আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষকসহ নানা পেশার প্রায় ৫ হাজার বাসিন্দার বাস এখানে। রয়েছে সরকারি স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বহু দোকানপাট। কিন্তু গত ৬ বছর ধরে এ হাউজিংয়ের বাসিন্দারা আছেন বিপদে। সেখানকার ৩১টি সড়কে বছরের অধিকাংশ সময়েই পানি জমে থাকে। রাস্তাগুলো ভেঙেচুরে একাকার। সবচেয়ে বড় সমস্যা অচল ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
হাউজিংটির তত্ত্বাবধানে থাকা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দাবি, অনেক বছর আগে এখানকার সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) এ নিয়ে মাথা ব্যথা না থাকায় দুর্ভোগের শেষ নেই হাউজিংয়ের বাসিন্দাদের। এদিকে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আর নগরভবনে ছুটতে ছুটতে রুপাতলী হাউজিং এস্টেট কল্যাণ সমিতির নেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে।
গতকাল দুপুর ১২টায় নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত রুপাতলী হাউজিং এস্টেটে গিয়ে দেখা যায় ৭ নম্বর রোডের প্রায় আধা কিলোমিটার পথে হাঁটু পানি। দোকানের পাশ ঘেঁষে কোনো রকমে হেঁটে চলছে সরকারি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। একই অবস্থা ১২ এবং ১৬ নম্বর সড়কের। একাধিক শিক্ষার্থী জানান, প্রতিদিন এভাবে কাদা পানির সড়কে আসতে হয়। এখানকার মুদি, ফার্মেসি দোকান মালিকেরা জানান, এই চিত্র তাঁরা দেখছেন কয়েক বছর ধরে।
রুপাতলী হাউজিং এস্টেট কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, গত ৬ বছরে হাউজিং এর সড়কে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সিটি করপোরেশন বলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাজ তারা করবে। আবার গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বলেছে সিটি করপোরেশন দেখভাল করবে রাস্তা।
আবুল হোসেন জানান, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হায়দার গত ১৮ নভেম্বর হাউজিং পরিদর্শনে এলে এর করুণ দশার চিত্র তুলে ধরেছেন। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও হাউজিং পরিদর্শন করে মাঝের রাস্তাটি করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু দুই দপ্তরের টানাটানিতে তাঁরা উন্নয়ন বঞ্চিত।
হাউজিং সংলগ্ন বিসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফ মো. আনিসুর রহমান জানান, হাউজিং এস্টেটের সড়ক সংস্কারের জন্য কয়েকবার ডিও লেটার দিয়ে বিসিসিতে তাগাদা দিয়েছেন। কিন্তু কিছুই হয়নি।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের রুপাতলী হাউজিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. অলিউল ইসলাম বলেন, অনেক বছর আগে এখানকার রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সিটি করপোরেশনের কাছে ছেড়ে দিয়েছেন। এখন নগরের বাসিন্দাদের সুযোগ-সুবিধা দেখবে নগরভবন কর্তৃপক্ষ। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় হাউজিং এ এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। গত মাসে চেয়ারম্যান বরিশাল আসলে হাউজিং কল্যাণ সমিতির নেতারা দেখা করে লিখিত দাবি তুলেছেন। এর প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রতিবেদন পাঠাতে জরিপ করছেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো. ফারুক জানান, রূপাতলী হাউজিং এস্টেট পরিদর্শন করে সেখানকার জনদুর্ভোগ দেখেছেন। নগর উন্নয়নে প্রকল্প অনুমোদিত না হওয়ায় বিসিসির অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে আছে। হাউজিং এস্টেটের সড়কসহ অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম বিসিসির নিজস্ব অর্থায়নে করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ বিষয়ে সিটি মেয়রের সঙ্গে কথা বলবেন।