টেস্টে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের হতশ্রী চেহারাটা কিছুতেই যেন বদলাচ্ছে না। গত মাসে তবু ‘ব্যাটাররা ছন্দে নেই’ মানতে রাজি ছিলেন না কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।
অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে অ্যান্টিগা টেস্টে ডমিঙ্গোও অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে যে আত্মবিশ্বাস দরকার, এই মুহূর্তে ব্যাটারদের সেটা নেই বলে বলে মনে করেন এই প্রোটিয়া কোচ। থিতু হয়েও অ্যান্টিগা টেস্টে ইনিংস বড় করতে পারেননি তামিম-শান্ত-জয়ের মতো টপঅর্ডার ব্যাটাররা। এই টেস্টে ২০ উইকেটের ১৩টিই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তাঁরা। উইকেট কিংবা ভালো বলেই যে এমনটা হচ্ছে, তা নয়। ঘরের মাঠেও একই ছবি দেখা গেছে। অ্যান্টিগা টেস্টে প্রথম সেশনে ৬ উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ, সেটি পরশু অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিজেও স্বীকার করেছেন।
সাকিব অকপটেই বলেছেন, বাংলাদেশ দলের ব্যাটারদের টেকনিকে সমস্যা আছে, ‘আমার মনে হয় না, আমাদের খুব বেশি টেকনিক্যালি ভালো খেলোয়াড় আছে। আমাদের টিমে যারা আছে সবারই অনেক টেকনিক্যাল সমস্যা আছে।’ যথারীতি সাকিবের আরেকটি সাহসী মন্তব্য ‘ভাইরাল’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কিন্তু একটা দলের ব্যাটিং লাইনআপে এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ব্যাটার থাকার পরও যদি টেকনিকের গলদ প্রকাশ্যে আসে, সেটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম বিষয়টির ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘টেকনিক এমন একটা ব্যাপার, কন্ডিশন যদি কঠিন থাকে, বোলার যদি ভালো হয়, ব্যাটারের টেকনিকের তত পরীক্ষা হবে। যার যত ভালো টেকনিক, সে তত কঠিন কন্ডিশনে টিকে থাকতে পারবে। অনেক সময় তারা টেকনিকের কারণে আত্মবিশ্বাসী হতে পারে না।’
এখানে শুধুই কি টেকনিকে দুর্বলতা নাকি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও জড়িয়ে, এ প্রশ্নে ফাহিম বলছেন, ‘তামিম যে বলে আউট হয়েছে (লেগ স্টাম্পের বল খেলতে গিয়ে), এসব বল থেকে টেস্টে বিরত থাকা যায়। এখানে টিকে থাকার ব্যাপার ছিল, বল পুরোনো হওয়ার অপেক্ষার ব্যাপার ছিল। সেটা হচ্ছে না। টেম্পারামেন্টের ব্যাপার তো আছেই, পরিকল্পনা কাজে লাগানোর ব্যাপারও আছে। সব মিলিয়ে টেকনিকটা বোধ হয় প্রথমে দরকার। যখন সে এটা কাজে লাগিয়ে ভালো হচ্ছে বুঝবে, তখন এটা চালিয়ে যেতে পারবে। টেকনিকই যদি না থাকে, চিন্তা করবে দ্রুত কিছু রান করে ফেলা যায় কি না। অনেকের ক্ষেত্রেই এ ব্যাপারটা ঘটতে পারে।’
মোহাম্মদ আশরাফুল এখন আছেন যুক্তরাজ্যে। সেখান থেকেই বাংলাদেশের খেলা দেখে নিজের ইউটিউবে পেজে রানের সঙ্গে যুঝতে থাকা মুমিনুলকে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, ‘আউটের চিন্তা বাদ দিয়ে আগ্রাসী হতে হবে মুমিনুলকে।’ গতকাল আশরাফুল আজকের পত্রিকার কাছে বাংলাদেশের সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের ব্যাটিং চিত্র সারমর্ম করলেন এভাবে, ‘এখানে টেম্পারামেন্ট-টেকনিক দুটোই দরকার। নিয়মিত ভালো মানের বোলিং বেশি না খেলা একটা কারণ। ধারাবাহিক একই লাইন-লেংথের বোলিং না খেলাও আরেকটা কারণ।’