জানালার ধারে একটা টেবিল পাতা। টি-ব্যাগ ঝোলানো সাদা মগে গরম ধোঁয়া উঠেছে বেশ। ভাবা যায়, গরম পানিতে ডোবানো এই টি-ব্যাগের বুকেই রং-তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠবে বাংলাদেশের পতাকা, দেশীয় উৎসব বা কোনো ঋতুর ছবি? সাদা খাতাকে পাত্তা না দিয়ে টি-ব্যাগের ওপরই ছবি আঁকেন টগবগে এক তরুণ। নাম মো. সাদিত উজ জামান। অনন্য এক মাধ্যমে ছবি এঁকে ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছেন এই তরুণ।
দেশের প্রথম সারির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চার বছর কাজ করেন সাদিত। এরপর নিজের উদ্যোগে একটি ফ্যাশন হাউস চালু করেন। পাশাপাশি ব্যবহৃত টি-ব্যাগের মতো জাঙ্ক ম্যাটেরিয়াল নিয়ে কাজ করছেন।
সাদিত আরও বলেন, ‘আমরা এত বেশি পরিবেশ নোংরা করি! দেখা গেল একটা টংয়ের দোকানে টি-ব্যাগ দিয়েই চা বানানো হচ্ছে। আবার চা পানের পর সেটাই আমরা রাস্তায় ফেলে দিচ্ছি। চিপসের প্যাকেটের বেলায়ও তা-ই, খাওয়ার পর ছুড়ে ফেলা হয়। তো এসব ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে নতুন কী করা যায়, তা-ই ভাবতে থাকি, যা কি না মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেবে যে আমরা যেন পরিবেশের ক্ষতি না করি, এভাবে আবর্জনা ফেলে।’
টি-ব্যাগ স্টোরিজের শুরু থেকেই সাদিত উজ জামানের মূল ফোকাস ছিল দেশ ও দেশীয় সংস্কৃতিকে যতটা দেশীয় ভঙ্গিতে তুলে ধরা যায়, তার দিকে। পয়লা বৈশাখ, শীতকালের পিঠা উৎসব, সরিষা ফুলের খেত—এসব ঋতুভিত্তিক কাজ করতে ভালোবাসেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই ভাগ্য়বান। কারণ আমাদের ছয়টি ঋতু আছে।’
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু কাজ করেছেন সাদিত উজ জামান। ডিসেম্বরে বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে যত টি-ব্যাগে তিনি ছবি আঁকার চেষ্টা করেন, সবই হয় লাল-সবুজে। একটা সিরিজ করেছেন বিজয় দিবস নিয়ে। ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই পতাকা কারিগরদের ব্যস্ততা বাড়ে। পতাকা সেলাই, পতাকা ফেরি করে ঘোরা, বঙ্গবন্ধু, মুক্তির গান নিয়ে তিনি টি-ব্যাগে গল্প এঁকেছেন।
২০১৮ সালের অক্টোবরে ইংকটোবর আর্ট কমপিটিশনে তিনি টি-ব্যাগের ওপর বম্বে সুইটসের চিপসের একটি ছবি এঁকেছিলেন। সে ছবিটি দেখার পর বম্বে সুইটস কোম্পানি তাঁর জন্য একটা গিফট হ্যাম্পার পাঠায়। সাদিত উজ জামান বলেন, ‘আমার কাছে সে সময় অনেক চিপসের প্যাকেট জমে যায়। বম্বে সুইটসের পটেটো চিপসের সবুজ প্যাকেট আর মিস্টার টুইস্টের লাল প্যাকেট দিয়ে আমি ২০১৮ সালের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের পতাকা বানিয়েছিলাম। টি-ব্যাগ স্টোরিজ আমার কাছে রোজকার ডায়েরি লেখার মতো। যখন যা মনে দাগ কাটে, তা-ই এঁকে রাখি একটি টি-ব্যাগে।’
তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। গত বছর ঢাকা শিল্পকলায় পেনসিল ফাউন্ডেশনের প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল সাদিত উজ জামানের কিছু টি-ব্যাগ স্টোরিজ। এ বছরও তাঁর কিছু কাজ নির্বাচিত হয়েছে তাদের প্রদর্শনীর জন্য। গত বছর রাজশাহী ইংকটোবর এক্সিবিশনেও টি-ব্যাগের কিছু কাজ স্থান পায়। এ বছর ময়মনসিংহ কার্টুন উৎসবে তাঁর কাজের প্রিন্টেড কপি প্রদর্শিত হয়েছে।