এমন একটি ভাষা থেকে এই বক্তৃতা উঠে আসছে, যা আপনাদের অনেকের কাছেই অজানা। সেই ভাষাটিই হয়তো নোবেল পুরস্কারে পুরস্কৃত হলো। এই ভাষার ধ্বনিমাধুর্য এই প্রথম আপনাদের সংস্কৃতি এবং সভ্যতার মরূদ্যানের দিকে বয়ে যাচ্ছে। আমি আশা করি প্রথমবারের জন্য হলেও, এটাই শেষবারের জন্য নয়—আমার দেশের সাহিত্যিকেরা সমমর্যাদায় বসার সুযোগ পাবেন আপনাদের মতো আন্তর্জাতিক লেখকদের সঙ্গে, যাঁরা এই দুঃখজর্জর বিশ্বে প্রজ্ঞা এবং আনন্দের সৌরভ ছড়িয়ে যাচ্ছেন।
কায়রোর এক বিদেশি সাংবাদিক আমায় বলেছিলেন, যখনই আমার নাম নোবেল পুরস্কারের প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, স্তব্ধতা নেমে এসেছিল। অনেকেই বিস্মিত হয়ে খুঁজছিলেন, কে আমি। আজ তাই নিজের পরিচয় দিতে চাই, একজন মানুষ যতটা সম্ভব নৈর্ব্যক্তিকভাবে পারে সেভাবে।
আমি দুই সভ্যতার সন্তান, ইতিহাস যে দুই সভ্যতার শুভবিবাহের সাক্ষী। এর মধ্যে প্রথমটি সাত হাজার বছরের প্রাচীন, যাকে বলা হয় ফারাওনিক সভ্যতা। দ্বিতীয়টি, চৌদ্দ শ বছরের পুরোনো, যা ইসলামিক সভ্যতা। আশা করি, এই দুটি সম্পর্কে আলাদা করে আপনাদের পরিচয় করানোর প্রয়োজন নেই, আপনারা শিক্ষিত, উচ্চমন্য। কিন্তু তবু আজকের পরিপ্রেক্ষিতে দুটো কথা বলে নেওয়া যায়।
ফারাওনিক সভ্যতার ক্ষেত্রে আমি সাম্রাজ্যের দখল আর পরাক্রান্ত যুদ্ধজয়ের কথা বলছি না। সেই গৌরব আজ শতচ্ছিন্ন এবং যার উল্লেখে আজকের আধুনিক মনন অস্বস্তিতেই পড়বে। এটাও বলব না যে কীভাবে তা প্রথমবারের জন্য ঈশ্বরের অস্তিত্বের সঙ্গে জুড়ে যায়। সেটা এক দীর্ঘ ইতিহাস এবং আপনাদের মধ্যে এমন একজনও নেই, যিনি প্রফেট রাজা আখেনাতনের নাম শোনেননি। এমনকি ওই সভ্যতার শিল্প ও সংস্কৃতির দিকটি নিয়েও আজ আর কিছু বলতে চাইছি না। পিরামিড অথবা স্ফিংস নিয়েও আর নতুন করে কী বলার আছে? যাঁরা নিজেরা চোখে দেখেননি, তাঁরাও এ নিয়ে বিশদে পড়েছেন। অতএব আমি ফারাও সভ্যতা নিয়ে গল্পের মতো করে কিছু বলি। আমার ব্যক্তিগত ঘটনাপ্রবাহ যার মধ্যে মিশে রয়েছে, যা আমাকে গল্প লেখক হিসেবে গড়ে তুলেছে।
মিসরীয় সাহিত্যিক নাগিব মাহফুজ নোবেল পুরস্কার পান ১৯৮৮ সালে।