বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে এ মাসের ১১ তারিখ। কারিগরদের তুলির ছোঁয়ায় পূর্ণ রূপ পাচ্ছে প্রতিমা। তাঁদের পাশাপাশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষও। তাঁরা ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও সংস্কারে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানা গেছে, ঋষিদের মূল ব্যস্ততা শুরু হয় আশ্বিন মাসের প্রথম দিকে। এ সময় বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপ থেকে ডাক আসে তাঁদের। তাঁরা ছুটে যান জেলা-উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে। বছরের এই একটা সময়ের অপেক্ষায় থাকেন তাঁরা।
দুর্গাপূজা সামনে রেখে বসে নেই মৌলভীবাজার শহরের ঋষি সম্প্রদায় ঢাকঢোল প্রস্তুতকারকেরা। পুরোনো ঢাক, কাটিঢোলসহ বাদ্যযন্ত্রের মেরামত চলছে পুরোদমে। সঙ্গে নতুন খোল, ঢাকঢোল তৈরিতেও ব্যস্ত তাঁরা। বছরের এই সময়র কাজ করে সারা বছরের সঞ্চয় রাখতে হয় তাঁদের।
জেলা শহরের পুরাতন থানা এলাকায় ঋষিদের দোকানে ঢুকতেই শোনা যায় ঢাক-ঢোলের শব্দ। কেউ পুরোনো ঢাকঢোল মেরামত করছেন। আবার কেউ নতুন ঢাকঢোল তৈরিতে ব্যস্ত।
কথা হয় মন্টু দাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ ব্যবসা পৈতৃক। তবে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে ঢাক, ঢোলবাদকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। জেলার পূজামণ্ডপ ছাড়াও বিভিন্ন বাসাবাড়িতে দুর্গাপূজায় বাদকদের ডাক পড়ে। তাই পুরোনো সব ঢাকঢোল মেরামত করছি।’
জেলা শহর প্রায় ২৫ বছর ধরে ঢাক বাজান স্বপন ঋষি। তিনি জানান, তাঁর পাঁচ সেট বাদ্যযন্ত্র আছে। দুই বছর আগে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার চুক্তিতে বিভিন্ন এলাকায় কাজের ডাক আসত। গতবার পুজোয় ৬০ হাজার টাকায় তিনটি মণ্ডপ ও এবার ৪০ হাজার টাকায় দুটি মণ্ডপের বুকিং পেয়েছেন।
তপন ঋষি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বসে আছি। তবে দুর্গাপূজার সময় ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ সময় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে বিভিন্ন এলাকায় কাজের ডাক আসে।’
সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার মহালয়া হবে ছয় অক্টোবর। ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান। ১৫ অক্টোবর হবে বিজয়া দশমী।
মৌলভীবাজার জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মৌলভীবাজার সদর উপজেলাসহ জেলার সাতটি উপজেলায় সর্বজনীন ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে সর্বমোট ১ হাজার পাঁচটি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদ্যাপন হবে। জেলায় সর্বজনীন পূজা মণ্ডপ রয়েছে ৮৭৯টি ও ব্যক্তিগত পূজামণ্ডপ রয়েছে ১২৬ টি।