ব্রিসবেনে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ভেন্যু অ্যালান বোর্ডার ফিল্ডের সঙ্গেই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) ন্যাশনাল ক্রিকেট সেন্টার। তিন দিন আগে ন্যাশনাল ক্রিকেট সেন্টারের সামনে তোলা এই প্রতিবেদকের একটা ছবি দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
নাজমুলের মনে পড়ে গেল প্রায় ২০-২২ বছর আগের স্মৃতি। লম্বা সময় বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টে কাজ করা এই ক্রিকেট বিশ্লেষক আফতাব আহমেদ, শাহাদাত হোসেন, ধীমান ঘোষদের নিয়ে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ক্রিকেট সেন্টারে। আফতাবদের সঙ্গে একই কর্মসূচিতে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জর্জ বেইল-টিম পেইনরাও। নাজমুল ফিরে গেলেন পুরোনো দিনে, ‘এই অ্যালান বোর্ডার ফিল্ডে কেটেছে প্রায় ৫৬ দিন। হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) প্রোগ্রামে অংশ নেওয়াই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। কাকতালীয়ভাবে তৎকালীন (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার) প্রধান নির্বাচক অ্যালান বোর্ডার, যাঁর নামে এই মাঠ, তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিন-চার দিনের জন্য। নিতান্ত ভদ্রলোক, বোঝার উপায় নেই খেলোয়াড়িজীবনে তিনি নিজেকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। কী দারুণ সব অভিজ্ঞতা।’
ন্যাশনাল ক্রিকেট সেন্টার হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার তৈরির কারখানা। অতি উন্নত জিমনেশিয়াম, ইনডোর নেট, অ্যাকুয়াটিক সেন্টার, লেকচার রুম—ক্রিকেটার পরিচর্যায় যা যা দরকার সবই আছে এখানে। আইসিসিতে কর্মরত অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল গতকাল ন্যাশনাল ক্রিকেট সেন্টারের কার্যক্রম নিয়ে বলছিলেন, ‘ওদের ছেলেমেয়েদের জাতীয় দল, এ দল, এইচপি, অনূর্ধ্ব-১৯ তো আছেই, কোচদের ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামও হয় এখানে। আমাদের এইচপি শুধু একটা দলকেই বোঝায়। কিন্তু এখানে প্রতিটি দলেরই একটা এইচপি প্রোগ্রাম থাকে।’
নাজমুলের চোখে ক্রিকেট তৈরির সেরা জায়গা হচ্ছে ব্রিসবেনের ন্যাশনাল ক্রিকেট সেন্টার, ‘সবচেয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সেখানে। এটা তাদের খেলোয়াড় তৈরির কারখানা। অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ওদের এসব উন্নত ক্রিকেটীয় অবকাঠামো আমাদের তুলে ধরা উচিত।’
শুধু নিজেদের ক্রিকেটের উন্নতিতেই নয়, অস্ট্রেলিয়া বাকিদেরও সুযোগ দেয় প্রতিভার পরিচর্যার এই কেন্দ্র ব্যবহারের। নির্ধারিত ফি দিয়ে ন্যাশনাল ক্রিকেট সেন্টারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন যে কেউ-ই। গতকাল লিটনরা যখন ন্যাশনাল ক্রিকেট সেন্টারে অনুশীলন করছিলেন, দেয়ালে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের এক অমর উক্তি চোখে পড়ল, ‘যদি এটা কঠিন হয়, আমি এখনই করব। যদি এটা অসম্ভব হয়, এটা দ্রুতই করব।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি রাজ্যের যে ক্রিকেট সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, অবকাঠামো—বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করা বাতুলতামাত্র। কিন্তু গত এক দশকে বিসিবি আর্থিকভাবে যেভাবে শক্তিশালী হয়েছে, দেশে ব্রিসবেনের মতো এমন একটি শক্তিশালী, উন্নত ক্রিকেট সেন্টার গড়া কি খুব কঠিন ছিল?