দেশ স্বাধীন হওয়ার সুফল কী, তা নিয়ে এখন অনেকে অনেক প্রশ্ন করে। সত্যিকার চেতনা থেকে সরে গেলেই এ প্রশ্নের জন্ম হয়। রফিকুন নবী কিন্তু সে সুফল পেয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭৩ সালে তিনি পেয়ে গেলেন গ্রিক সরকারের বৃত্তি। শিল্পকলায় উচ্চতর শিক্ষালাভের আহ্বান। তিনি নিজে আবেদন করেননি। কিন্তু বৃত্তি এসে হাজির!
পরিচিত অনেকেই বলতে লাগল, এটা স্বাধীনতার সুফল। কারণ, এর আগে পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মূলত পশ্চিম পাকিস্তানি শিল্পীদেরই বিদেশে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিত। রফিকুন নবী একবার মনোনীত হওয়ার পরও তাঁর জায়গায় একজন পশ্চিম পাকিস্তানি শিল্পীকে পাঠানো হয়েছিল। সে স্মৃতি ছিল মনে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বৃত্তি পেয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর স্বহস্তে সবুজ কালিতে স্বাক্ষর ছিল বৃত্তি পাওয়ায় বিদেশ পাড়ি দেওয়ার ছাড়পত্রে।
গ্রিসে যাওয়ার পর ফাইন আর্ট স্কুলে কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর দপ্তরের প্রধান এক বর্ষীয়ান নারী বললেন, ‘এই স্বাক্ষরটি কি তোমাদের দেশের মহান নেতা শেখ মুজিবুরের?’
রফিকুন নবী বললেন, ‘হ্যাঁ।’
ভদ্রমহিলা সব কাগজ ফেরত দিলেও বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর করা কাগজটি ফেরত দিলেন না। তিনি বললেন, ‘এটা ফেরত পাবে না। এটা আমি আমার সংগ্রহে রাখব।’
ঠিক তখন বফিকুন নবী বুঝতে পারলেন এই কাগজটির মাহাত্ম্য। বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরটি যে খুবই মূল্যবান, সেটা বুঝতে পেরে তিনি কাগজটি ফেরত চাইলেন। ওই নারী তো কিছুতেই ফেরত দেবেন না। মন খারাপ করে রফিকুন নবী ক্লাসে চলে গেলেন।
বিকেলের দিকে সেই নারী এলেন রফিকুন নবীর কাছে। বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরসমেত কাগজটা ফেরত দিলেন। বললেন, ‘নাও, দেখলাম তোমার মন খারাপ হয়েছে। তোমাদের অত বড় নেতার সই। রেখে দিয়ো যত্ন করে। তবে কি জানো, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আমাদেরও কম নেই।’
সূত্র: রফিকুন নবী, বঙ্গবন্ধু, নানা রঙে নানা রেখায়, পৃষ্ঠা ৬৭-৬৮