তারাগঞ্জের রাজিনা আখতারেরা চার বোন। বড় বোনের বিয়ে পাশের জেলা নীলফামারীতে হওয়া তিনি মা-বাবার খোঁজ তেমন নিতে পারেন না। তাই বাবা আব্দুল আজিজ অনেক ভেবে রাজিনাকে বাড়ির পাশে বিয়ে দেন, যাতে মেয়েকে কাছে পেতে পারেন, মেয়ের জামাই ছেলের অভাব পূরণ করতে পারেন। কিন্তু সেই আশা ফিকে হয়ে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিয়ের পর থেকে যৌতুকসহ নানা কারণে রাজিনাকে নির্যাতন শুরু করেন স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক তাঁর গর্ভপাত ঘটানো হয়। শেষে তাঁকে তালাক দেন স্বামী।
রাজিনা এ ঘটনায় গত বুধবার তারাগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পুলিশ তাঁর শ্বশুর আজিজুল হককে গ্রেপ্তার করে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রহিমাপুর হাজীপাড়া গ্রামের আব্দুল আজিজের মেয়ে রাজিনার (১৯) সঙ্গে একই গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে মাহাবুল ইসলামের ২০২০ সালে বিয়ে হয়। বিয়ের পর যৌতুকের জন্য মারধর শুরু করেন। মেয়ের সুখের আশায় বাধ্য হয়ে রাজিনার বাবা তিন দফায় ৫ লাখ টাকা দেন।
রাজিনা সংসার করা অবস্থায় গর্ভধারণ করলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গত বছরের ১৪ জুলাই শাশুড়ি তাঁকে সেমাই খেতে দেন। দুই ঘণ্টা পর পেটের ব্যথা শুরু হলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে রাজিনাকে অটোরিকশায় করে রংপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গর্ভপাত করানো হয়।
ঘটনার পর রাজিনাকে নিয়ে সংসার করার জন্য গ্রাম্য সালিসে প্রতিশ্রুতি দেয় স্বামীর বাড়ির লোকজন। কিন্তু পাঁচ মাস যেতে না যেতেই ২২ ডিসেম্বর রাজিনাকে তালাক নোটিশ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে গত বুধবার তারাগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
রাজিনা অভিযোগ করেন, ‘সেমাই খাওয়ার পর যখন পেটে ব্যথা উঠে, তখন শাশুড়ি এলোপাতাড়ি পেটে লাথি মারেন। একপর্যায়ে আমি সন্ধ্যায় খুব অসুস্থ হয়ে যাই। চিৎকার করতে থাকলে হাত ও মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে। আমাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ভোরবেলা অটোতে করে রংপুরে নিয়ে যায়। সেখানে ১৬ জুলাই আমার সাত মাসের সন্তানকে গর্ভপাত করানো হয়।’
তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুক আহম্মদ বলেন, ‘পাঁচজনকে আসামি করে ওই গৃহবধূ থানায় মামলা করেছেন। একজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’