১০০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গতকাল বরিশাল মুক্ত দিবসে সম্মাননা দিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। সম্মাননা অনুষ্ঠানে মেয়রের সঙ্গে এক মঞ্চে ছিলেন বরিশালের বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। গত ১৮ আগস্ট প্রশাসনের সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের বিরোধের পর এই প্রথম সিটি মেয়রের আমন্ত্রণে একসঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দেখা গেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানানোয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা মেয়র সাদিককে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে মেয়র সাদিক গত ১৮ আগস্টকে ইঙ্গিত করে ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত দাবি করে বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ না করলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব না। দেশজুড়ে আলোচিত ওই ঘটনায় প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে দায়ের করা পৃথক মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন মেয়র সাদিক।
সকালে নগরীর ওয়াপদা কলোনি টর্চার সেল ও বধ্যভূমিতে সম্মাননা অনুষ্ঠানের বক্তব্যে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের যে সম্মান দেখিয়েছেন সে জন্য মেয়রসহ প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। স্কুল কলেজে গিয়ে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস শেখাতে হবে। জেলা প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা বাবার কথা স্মরণ করে বলেন, আপনাদের প্রতি ভালোবাসা আজীবন থাকবে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ঐতিহাসিক জায়গা এই টর্চার সেল। মুক্তিযোদ্ধার এখানে এসে আবেগ, ত্যাগের কথা বলেছেন। বিশেষ ধন্যবাদ জানাই মেয়রকে। তিনি শ্রম, মেধা দিয়ে এটি সংস্কার করেছেন। এখানে এলেই হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের কথা মনে পড়ে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, ‘কর্মকর্তাদের বলি, আমাদের যে দায়িত্ব তা যদি সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করি তবেই সার্থক হবে। আশা করি বরিশালে আমরা যে পরিবর্তন করতে চাই তা বাস্তবে রূপ নেবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এই বরিশালে পরিবর্তন আনতে চাই, সুন্দর করতে চাই। আমরা যে যে পদেই থাকি না কেন এমন কিছু করব না যাতে সরকার, প্রধানমন্ত্রী বিব্রত হন, কষ্ট পান। মেয়রকে ধন্যবাদ জানাব, এমন সুন্দর একটি অনুষ্ঠান করায়।
সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে বলেন, যতক্ষণ মস্তিষ্ক কাজ করে এই নগর, সিটি করপোরেশন নিয়ে ভাবি। অনুরোধ থাকবে টর্চার সেলে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আসবেন। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা হারিয়ে গেলে চেতনাও হারিয়ে যাবে। সোনার বাংলাদেশ করতে হলে সোনার মানুষ দরকার।
মেয়র গত ১৮ আগস্টের কথা ইঙ্গিত করে বলেন, ‘যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ না করলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব না। এটা আমার বিশ্বাস। এটা কম্বাইন্ড জব। সেটি যদি না হয় কীভাবে উন্নয়ন সম্ভব। এমন কিছু করতে চাই যা বরিশালের মানুষ মনে রাখে।’
জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনেয়ার হোসাইন বলেন, ‘গোটা কর্মসূচিতে নতুনত্ব ছিল। এভাবে আর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানানো হয়নি। টর্চার সেলেই এখন থেকে ব্যাপক কর্মসূচি হওয়া উচিত। আমরা ডিসি অফিসের সামনে ফুল দেব এটা ঠিক না। কর্মসূচিতে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও ছিলেন। আমরাও আশা করি প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের মধ্যে দূরত্ব থাকবে না। যেটা হয়েছিল সেটা মেয়রও চান না, আমরাও চাই না।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শ্রমিক লীগের জেলা সভাপতি শাজাহান হাওলাদার বলেন, সম্মাননা অনুষ্ঠান ছিল উৎসবমুখর। জেলা বা মহানগর নয়, বয়সসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরি বিবেচনায় এ সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার রোহান সাংবাদিকদের বলেন, সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। ১৮ আগস্টের পর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই ঘটনা অতীত হয়ে গেছে। বিষয়টি আর না টানা উচিত।
উল্লেখ্য, গত ১৮ আগস্ট বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে শোক দিবসের ব্যানার নামানোকে কেন্দ্র করে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় প্রধান আসামি করা হয় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে। এরপর থেকে প্রশাসন ও মেয়রের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়।