‘রাস্তায় থাকি, রাস্তায়ই খাই। নামে মুসলমান কিন্তু খিদা তো আর ধর্ম বুঝে না। এখান থেকা প্রতিদিন ইফতারি নিই। এরা যেই ধর্মেরই হোক, ওগো লেইগা আল্লাহর কাছে দোয়া করি।’ রাজধানীর বাসাবো এলাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের ইফতারের আয়োজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান দিনমজুর আজিজ মিয়া।
মানুষের বাসায় কাজ করেন নন্দীপাড়ার হালিমা। তিনি বলেন, ‘খাবারের গায়ে তো ধর্মের নাম লেখা থাকে না। আর এদের কাছ থেকা প্রতিদিন ইফতারি নেই। এরা কোন ধর্মের এইটা তো বড় কথা না, বড় কথা হইল এরা আমাগো কষ্ট বুঝে।’ বাসাবোর বাসিন্দা বৃদ্ধা জাহানারা বেগম বলেন, ‘ভিক্ষা কইরা দিনে এক-দেড় শ টাকা পাই। এখান থেকে ইফতারি নিলে ঘরের সবাইরে নিয়া খাইতে পারি।’
মঙ্গলবার বিকেলে বিহারে গিয়ে দেখা যায়, ইফতারি নিতে আসা বেশির ভাগই বৃদ্ধা, নারী ও শিশু। প্রথম রোজা থেকেই বিনা মূল্যে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ইফতারি বিতরণ করছে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোজার শুরুতে ১৫০ জনের আয়োজন করা হলেও এখন প্রতিদিন ২০০ জনের ইফতারির আয়োজন করা হচ্ছে।
বৌদ্ধবিহারটি ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে বৌদ্ধ মহাবিহারের প্রয়াত প্রধান শুদ্ধানন্দ মহাথেরো এই ইফতারি বিতরণ শুরু করেন। করোনার কারণে মাঝে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর থেকে আবারও ইফতারি বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানীর সবচেয়ে প্রাচীন এই বৌদ্ধবিহারটি। এখানে প্রায় ২৩০ জন অনাথ বৌদ্ধ ছাত্র বসবাস করে।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহসাধারণ সম্পাদক দেবপ্রিয় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরের নাগরিক ভিক্টর লি এ দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ ও দরিদ্রদের ইফতারি বিতরণের জন্য আর্থিক সহায়তা দেন। বৌদ্ধ মহাবিহারের প্রয়াত প্রধান শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর উদ্যোগে সে সময় প্রতিদিন ৫০০ মানুষকে ইফতার করানো হতো। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়বে বলে মনে করি।’
দেবপ্রিয় বড়ুয়া আরও বলেন, অনেক নিম্ন আয়ের মানুষেরা রোজা থাকেন কিন্তু পর্যাপ্ত ভালো মানের ইফতারি পান না। তাঁদের ইফতার নিশ্চিত করার চেষ্টা করে বৌদ্ধ মহাবিহার। ধর্ম যার যার হতে পারে কিন্তু খেয়ে বেঁচে থাকার অধিকার সবার। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান একসঙ্গে খাবে, কাজ করবে, দেশকে এগিয়ে নেবে—এটাই আমাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।’