বিশ্বাস করুন, যে শিশুটির কথা বলছি তার নাম মো. লাবিব আব্দুল্লাহ। জন্ম এ দেশেই, দশ মাস আগে। তার বাবা রাকিবুল ইসলাম ও মা মোছা. লুৎফুন্নেছা খাতুনও এ দেশেরই নাগরিক। কিন্তু শিশুটির জন্মসনদে তার জন্মস্থান রাজশাহী লিখলেও বাবা-মায়ের জাতীয়তার স্থানে গোটা গোটা হরফে লেখা হয়েছে উগান্ডা! অথচ বাবা-মাসহ শিশুটির আবাস রাজশাহীর পুঠিয়ায়। তারা কখনো উগান্ডাই যাননি।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বলা হয়েছে, সার্ভারের কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটা হয়েছে। আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ ও ছাপা কাগজে এমনই একটি খবর বেরিয়েছে।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে পড়ছে গত বছরে এ রকম কয়েকটি ঘটনার কথা। সুনামগঞ্জের অন্তত এগারো জনের পরিচয়পত্রে জন্মস্থান লেখা হয়েছিল তুরস্ক। মৌলভীবাজারের কয়েকজন ব্যক্তি সংশোধনের আবেদন করার পরেও পরিচয়পত্রে তাঁদের জন্মস্থান লেখা হয়েছিল ভেনেজুয়েলা। এ ছাড়া নামের বানান, ঠিকানা বা বয়সের ভুল তো অহরহ হয়েই চলছে। এসব ভুল হতেই পারে। কিন্তু একজন বাংলাদেশি নাগরিক কীভাবে উগান্ডা, তুরস্ক কিংবা ভেনেজুয়েলায় জন্মগ্রহণ করতে পারেন, এটা বোধগম্য নয়। একের পর এক বাংলাদেশি নাগরিক যেন পাইকারি হারে অন্য দেশের হয়ে যাচ্ছেন!
হালকা কথা বাদ দিয়ে এবার কাজের কথায় আসা যাক। এই যে জন্মসনদ, পাসপোর্ট বা পরিচয়পত্র যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তৈরি করা হয়, তাতে নিশ্চয়ই তথ্য যাচাই করার সুযোগ থাকে, নিশ্চয়ই সত্যতা মিলিয়ে দেখার সুযোগ থাকে। এ কাজগুলো একাধিক হাত হয়েই নিশ্চয়ই সম্পন্ন হয়। তাহলে সার্ভারের কারণে কিংবা কারিগরি ত্রুটির কারণে তথ্য ভুল হয় বললে সেটা একরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা হয়ে যায়। এই কারিগরি কাজগুলোও তো নিশ্চয়ই কেউ না কেউ নিয়ন্ত্রণ করেন, কেউ না কেউ তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁরা এবং যাঁরা তথ্য যাচাই করেন, কেউই কোনোভাবে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে সার্ভারের দোষ দিতে পারেন না। ভুক্তভোগীদের ওই সনদে যখন ইউপি চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করেন, তখন তিনিও কি না দেখেই সই দিয়েছিলেন?
সনদ সংশোধনীর জন্য রাকিবুল ইসলাম আবার পরিষদে টাকা জমা দিয়েছেন। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় যে টাকার জন্যই বারবার নানা জায়গায় জন্মসনদ, পাসপোর্ট বা পরিচয়পত্রে ইচ্ছাকৃত ভুল করা হয়?
আমাদের দেশে অনেক কিছু ডিজিটালাইজড হওয়ার পর কাজে গতি পেয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যেমন পানি কিংবা বিদ্যুৎ বিল এখন আর লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে দিতে হয় না। এ রকম কারিগরি উন্নতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এসব দেখভালের দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ যে অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন না, সেটা তো মিথ্যা নয়। যাঁদের বেতন জনগণের কর থেকেই দেওয়া হয়, তাঁরা বারবার ভুল করেন এবং এর জন্য জনগণকেই ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। তাঁদের কাছে এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।