রাত পোহালেও মেরাজ হকের এইচএসসি পরীক্ষা। কিন্তু গত বুধবার মধ্যরাতে তাঁর বাবা শরিফুল হক মিল্টন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এরপরও মনোবল ধরে রেখে বাড়িতে বাবার লাশ রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।
মেরাজ ফুলবাড়ীর সাইফুর রহমান সরকারি কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে অংশ নেন। তিনি উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের হকটারী এলাকার বাসিন্দা। ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের কারিগরি শাখা থেকে মেরাজ পরীক্ষা দিচ্ছেন। বাবার দোয়া নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। অথচ বাবার লাশ রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে মন চাইছিল না তাঁর।
পরীক্ষা কেন্দ্রে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই তাঁদের অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে আসেন। কেন্দ্রের কক্ষগুলোতে রোল নম্বর খোঁজার জন্য যখন সবাই ব্যস্ত ওই সময় মেরাজ নিজের কক্ষের সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন।
সহপাঠী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘মেরাজ পরীক্ষা দিতে গিয়ে বাবার শোকে পুরো সময়ই কেঁদেছে। এক হাতে চোখের পানি মুছেছে আর লিখেছে খাতায়। আর এ দৃশ্য দেখে তাঁর সহপাঠী, শিক্ষকসহ পুরো কেন্দ্রেই নেমে আসে শোকের ছায়া।’
মেরাজের এক স্বজন পলাশ হোসেন বলেন, ‘বাবাকে হারানোর পর ভেঙে পড়েন মেরাজ। অনেকটা জোর করে তাঁকে পরীক্ষা হলে আনতে হয়েছে। তবে কান্না থামেনি। আমরা সান্ত্বনা দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ফলের পীঠে বসিয়েছি।’ তিনি আরও জানান, গতকাল দুপুরে তাঁর বাবার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
সাইফুর রহমান সরকারি কলেজর অধ্যক্ষ ও পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার্থী মেরাজ হকের বাবার মৃত্যুর খবরে আমরাও ব্যথিত হয়েছি। এরপরও প্রকৃতির নিয়ম মেনে সমবেদনা ও সান্ত্বনা জানিয়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। তিনি সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।