হোম > ছাপা সংস্করণ

অজানা বীরাঙ্গনা

নুসরাত জাহান শুচি

উত্তাল মার্চে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর যখন পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করে, ঠিক একই সময় যার যা কিছু আছে তা নিয়েই যুদ্ধের দামামা বাজায় বাঙালি। ৩০ লাখ প্রাণ ও প্রায় ২-৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।

বাংলার আকাশে পতপত করে উড়তে থাকে স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা। শরণার্থীরা দেশে ফিরতে শুরু করে। মানুষ খুঁজতে থাকে তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের। কাউকে পাওয়া যায় জীবিত, কাউকে মৃত, কাউকে আর শেষ পর্যন্ত পাওয়াও যায়নি।

স্বাধীনতার পর কেউ বীরশ্রেষ্ঠ, কেউ বীর উত্তম, কেউ পেয়েছেন বীর বিক্রম উপাধি। কেউবা পেয়েছেন শহীদের সম্মান। মুক্তিযোদ্ধারা ফিরেছেন বীরের বেশে।

তবে তখন সবাই ভুলে যায় মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজেদের সর্বস্ব খোয়ানো একদল অভাগীর কথা। না, ভুলে গেলে বললে মিথ্যা বলা হবে। তখন তাঁরাও পেয়েছিলেন খেতাব। মুক্তিযুদ্ধের পর তাঁরা পেলেন অপয়া ও অশুচি খেতাব। পরিবার, সমাজ, আত্মীয়স্বজন সবার কাছে তখন তাঁরা কেবলই বোঝা। যেই পরিবার তাঁদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি, সেই পরিবার, সেই সমাজই তাঁদের ত্যাগ করল।

অথচ যাঁরা যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন, তাঁদের মৃত্যুযন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল একবার। আর প্রতিদিন কয়েকবার মৃত্যুযন্ত্রণা সহ্য করেছেন বীরাঙ্গনারা। প্রতিটি মুহূর্তে দেশের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। ৯ মাসে অন্তত কয়েক হাজার বার মরেছেন। স্বাধীনতার পর যখন সবার যুদ্ধ শেষ, তখনো তাঁরা যুদ্ধ করেছেন। জন্ম দিয়েছেন যুদ্ধশিশুর। তাঁরা হয়েছিলেন বীরাঙ্গনা মাতা (বীর মাতা)।

তাঁদের সংখ্যা ছিল কয়েক লাখ। সাত বছরের শিশু থেকে সত্তর বছরের বৃদ্ধা, দিনমজুরির স্ত্রী-কন্যা, ছাত্রী বা সম্ভ্রান্ত কোনো পরিবারের তনয়া—কেউই এই পাশবিক নির্যাতন থেকে মুক্তি পাননি।

তাঁদের ওপর অত্যাচার কেউ বন্ধ করতে পারেনি। আর স্বাধীনতার পরও রাষ্ট্র, পরিবার, সমাজ—কেউই তাঁদের ওপর নতুন করে মানসিক অত্যাচার করতে ভুল করেনি। কেবল একজনই ছিলেন—বঙ্গবন্ধু। যিনি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমাদের জাতির পিতা, স্বাধীন বাংলার রূপকার রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত নারীদের যথাযোগ্য সম্মান এবং মর্যাদা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে আহ্বান জানান এবং বীরাঙ্গনাদের নিজের মেয়ে হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধকালীন ধর্ষিত নারীদের বীরাঙ্গনা খেতাব দেয় ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর।

এমনকি মুক্তিযুদ্ধের একটা বড় অংশ হয়েও তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার খেতাব পেতে স্বাধীনতার পরও সময় লেগেছিল ৩৮ বছর। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর প্রথম বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দেওয়া হয়।

১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ‘বীরাঙ্গনা দিবস’ ঘোষণা করেন। কিন্তু তার পরও কি তাঁদের দেওয়া হয়েছে প্রাপ্য সম্মান? নাকি তা কেবল কিছু সংগঠন, পত্রিকার পাতা, উপন্যাস বা কবিতার লাইনেই সীমাবদ্ধ।

স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসেও মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনাদের অবদান নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে নেই বিস্তারিত কোনো বর্ণনা। শিশু-কিশোর যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে জানতে শুরু করে, তখনো ‘বীরাঙ্গনা’ শব্দটির ব্যবহার এমনভাবেই রাখা হয় যেন কোনোরকমে বাদ দিয়ে দিলেই লজ্জার হাত থেকে বেঁচে যেত সমাজ!

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত যে বইগুলো পড়ানো হয়, তাতে ‘৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা’—এর বেশি বীরাঙ্গনা সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা নেই। আর যদিওবা কেউ বীরাঙ্গনা নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু জানতে চায়, ‘ছি ছি, তা তো ভীষণ লজ্জার কথা’ বলে এড়িয়ে যায়। তাই বীরাঙ্গনা অধ্যায়টি নতুন প্রজন্মের কাছে অধরাই থেকে গেছে।
আসলেই কী হয়েছিল বীরাঙ্গনাদের সঙ্গে? কতটা কষ্টে কেটেছিল তাঁদের একাত্তর? কী ত্যাগ করেছিলেন তাঁরা? কী অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল—তা দু-একটি কবিতা বা উপন্যাস পড়লেই বোঝা যায়। অনুভব করতেই গা শিউরে ওঠে।

দেশের জন্য এত ত্যাগের পরও স্বাধীনতার পর দেশ ত্যাগ করতে হয়েছিল। কাগজে-কলমে সম্মান পেলেও এখনো সমাজে তাঁরা অবহেলিত। বীরাঙ্গনা দিবস থাকলেও তা আড়ম্বরহীনভাবেই কেটে যায়। কজনই বা জানে এ তথ্যটি? স্বাধীনতাযুদ্ধের এই বিশাল অংশকে ছাড়া আজও অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে সোনার বাংলার ইতিহাস।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ