বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পার করলেও এ সময়ে হয়েছে মাত্র সাতটি সমাবর্তন। সবশেষ সপ্তম সমাবর্তন হয়েছে ২০১৬ সালে। এরপর এখনো অষ্টম সমাবর্তন না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সমাবর্তন পরম আকাঙ্ক্ষার এক নাম। পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের পর অর্জিত ডিগ্রির সনদপত্র গ্রহণের বর্ণাঢ্য আয়োজনে শামিল হতে চাওয়া তাঁদের স্বপ্ন। অথচ সমাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত সমাবর্তন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ থেকে পাস করেছেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছরই সমাবর্তনের আয়োজন করে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর দূরের কথা, কয়েক বছরেও একবার সমাবর্তন হয় না। এই ব্যর্থতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। যথাযথ উদ্যোগ আর সদিচ্ছা থাকলে প্রতিবছরই সমাবর্তনের আয়োজন করতে পারত কর্তৃপক্ষ।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালের ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আচার্য আব্দুল মোনেম খানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় বাকৃবির প্রথম সমাবর্তন। চার বছর পর আবু সাঈদ চৌধুরীর সময়ে দ্বিতীয় সমাবর্তন হয় ১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর, যা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম।
এরপর ১৯৯৪ সালের ৫ জুন, ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর, ২০০৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সালের ৮ মার্চ এবং ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সপ্তম সমাবর্তন হয়।
সবশেষ ২০১৫ সালে পাস করা শিক্ষার্থীদের সপ্তম সমাবর্তনে অন্তর্ভুক্ত না করায় চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। সপ্তম সমাবর্তনে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত না করায় গ্র্যাজুয়েট হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা সমাবর্তন পাননি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও নতুন পাঁচটি ব্যাচ স্নাতক শেষ করলেও পায়নি সমাবর্তন।
ভেটেরিনারি অনুষদের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত অনুষ্ঠানের নাম সমাবর্তন। ২০১২ সালে ভর্তি হওয়ার পর শুধু ২০১৬ সালে এটা হতে দেখেছি। অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনের আয়োজন করলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব। এটা আমাদের জন্য যেমন কষ্টের, তেমনি লজ্জার। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন অতি দ্রুত সমাবর্তনের আয়োজন করবে।’
এস এম ইসমাইল মুসা নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতার মধ্যে অন্যতম হলো গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সময়মতো সমাবর্তনের আয়োজন না করা। যাঁরা স্নাতক শেষ করেন, তাঁরা কিন্তু এই সমাবর্তনের জন্য চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকেন। তবে প্রশাসন এতটা উদাসীন যে ৬০ বছরে মাত্র সাতবার সমাবর্তনের আয়োজন করতে পেরেছে।’
এ বিষয়ে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মতো আমি নিজেও চাই দ্রুত সমাবর্তন হোক। আমি এটা আয়োজন নিয়ে আলোচনাও করেছিলাম। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে পরে আর এগোতে পারিনি। আশা করছি শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারব।’