হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সারিতে দাঁড়িয়েও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন রোগীরা। চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীরাও বাড়তি সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীসহ ১৬৬টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৯৪ জন।
হাসপাতালটিতে ৩১ জন চিকিৎসকের স্থলে চিকিৎসক রয়েছেন ২১ জন। ৬ জন মিডওয়াইফসহ (ধাত্রী) ২৬ জন নার্সের স্থলে রয়েছেন ২২ জন। তৃতীয় শ্রেণির ৮৪ জনের বিপরীতে ৪২ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৫ জনের স্থলে রয়েছেন ৯ জন।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশু, মেডিসিন, সার্জারি, ইএনটি, অ্যানেসথেওলজি, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকস, চর্ম ও যৌন, চক্ষু জুনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিকেল অফিসার (ইউনানি), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও গ্রাফার), পরিসংখ্যানবিদ, ক্যাশিয়ার, স্টোরকিপারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি রয়েছে। ১০ জন কনসালট্যান্ট থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র একজন। এতে সাধারণ রোগীরা পড়েন নানা ভোগান্তিতে।
হোমনা উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন হাসপাতালে গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় জটিল রোগে ঢাকা ও কুমিল্লায় রেফার করেন মেডিকেল অফিসারেরা। এ ছাড়া হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির জনবলের সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও থাকছে না।
এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনটি এক্স-রে মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে এক্স-রে হচ্ছে না। আনুমানিক ছয় বছর ধরে হাসপাতালের এক্স-রে টেকনিশিয়ান নেই বলে জানা গেছে। এতে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে এক্স-রে করতে হচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা আবদুল বাতেন নামের এক রোগী বলেন, তিনি বাইরে থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে এক্স-রে করেছেন। যা হাসপাতাল থেকে করাতে লাগত ৮০ টাকা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শহীদ উল্লাহ্ বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন। অনেক সময় আমরা কোনো রোগীর ডায়ালাইসিস করতে সমস্যা হলে অথবা জটিল কোনো সমস্যা থাকলে ঢাকা বা কুমিল্লায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি শিগগিরই জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেওলজি) পেয়ে যাব। বাকি খালি থাকা কনসালট্যান্টসহ অন্যান্য শূন্য পদগুলো পূরণের জন্যও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’