পেশায় আঁকিয়ে তাঁরা। বইমেলা এলে অন্য সব আঁকাআঁকির ছুটি। মেলায় মুখচ্ছবি এঁকে মাসটি কাটে তাঁদের। বইমেলার সঙ্গে এই আঁকাআঁকির সম্পর্ক না থাকলেও এটি দিন দিন মেলার অনানুষ্ঠানিক অংশ হয়ে উঠেছে। টিএসসির দিকের গেট পেরোলে পথের পাশে এই শিল্পীদের দেখা মেলে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মুখচ্ছবি আঁকেন তাঁরা।
১৫ বছর ধরে বইমেলায় আঁকেন আমির হোসেন হামজা। মেলায় প্রথম আঁকার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘বাংলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে প্রথম ছবি আঁকি। তখন বেশ কদর পাইতাম। এখনো আছে, তবে ছবি দিয়ে আঁকতে বলে বেশির ভাগ। দিন ভালো হলে ৮-১০টি, আর কম লোক হলে ৪-৫টি ছবি আঁকি।’
আসাদুজ্জামান সুজন নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। চারুকলায় পড়ালেখা করা অবস্থায় বইমেলায় আঁকাআঁকি দলের সঙ্গে ভিড়ে যান। প্রথম দিকে বেশ কষ্ট হতো। ঝটপট একজনকে দেখে তার মুখচ্ছবি আঁকা চাট্টিখানি কথা নয়। বড় ভাইয়েরা সাহস দিয়েছেন। এখন মেলার পাকা আঁকিয়ে তিনি। দর্শনার্থীদের মুখচ্ছবি আঁকতে গিয়ে মজার অভিজ্ঞতাও হয়েছে তাঁর। বললেন, ‘অনেকে সরাসরি চেহারা দেখিয়ে আঁকতে নিষেধ করে। তারা মোবাইলে ছবি তুলে দেয়। চেহারা আরেকটু ফরসা করার জন্য তাতে ফিল্টার বসিয়ে দেয়। পরে মোবাইলের ছবি দেখে যখন এঁকেছি, তখন আর তাকে চেনা যায় না।’
আঁকিয়েদের ভাষ্যমতে, ছোট ছবি ৫০০, মাঝারি ৮০০ এবং বড় ছবি আঁকতে খরচ পড়ে ১ হাজার টাকা। মোবাইলের এই যুগে যেখানে ফটাফট ছবি তোলার সুযোগ মেলে, সেখানে আঁকার চাহিদা কতটুকু? গালিব আহসান আঁকিয়ে নিচ্ছিলেন তাঁর বড় ভাইয়ের ছবি। উপহার দেবেন। বললেন, ‘মোবাইলে সবাই ছবি তুলতে পারে। কিন্তু আঁকা ছবির মধ্যে একটা ভালোবাসা থাকে। এর মর্যাদা আলাদা।’
অমর একুশে বইমেলা পেরিয়েছে ১৯ দিন। ধীরে ধীরে দর্শনার্থী ছাপিয়ে পাঠকের মেলা হয়ে উঠেছে। গতকাল মেলায় দর্শনার্থী ছিল স্বাভাবিক। বিক্রি-বাট্টাও মন্দ নয়। বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, গতকাল নতুন বই এসেছে ১১৫টি। এখন পর্যন্ত মোট নতুন বইয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৯৯৩।
অনেকে মোবাইলে ছবি তুলে দেয়। চেহারা আরেকটু ফরসা করার জন্য তাতে ফিল্টার বসিয়ে দেয়। পরে মোবাইলের ছবি দেখে যখন এঁকেছি, তখন আর তাকে চেনা যায় না। আসাদুজ্জামান সুজন, অঙ্কনশিল্পী
বইমেলার মূলমঞ্চে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: হাসান আজিজুল হক’ শীর্ষক আলোচনা। রিকশাচিত্র প্রদর্শন বই সংলাপ মঞ্চে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সদ্য প্রকাশিত কবিতা সংকলন ‘মুজিবমঞ্জুষা’ নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, দুলাল সরকার, মাসুদ আলম বাবুল, কাজী আনারকলি, বাপ্পী রহমান ও নাজমুল হুসাইন বিদ্যুৎ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আনজুমান আরা, বদরুল হুদা, মাহমুদুল হাকিম তানভীর, আওরঙ্গজেব আরু এবং রূপশ্রী চক্রবর্তী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল নৃত্য পরিবেশনা।