১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির অন্যতম বিষয় ছিল পাহাড়ের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা। চুক্তির ২৪ বছরপূর্তি হচ্ছে আজ ২ ডিসেম্বর। এতদিনেও তিন পার্বত্য জেলার একটি ভূমি বিরোধেরও নিষ্পত্তি হয়নি।
অথচ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০০১ সালে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন করে সরকার। আইনটি ২০১৬ সালে সংশোধন করা হয়। কিন্তু আইন সংশোধনের পর কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। এই অবস্থায় থমকে আছে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ। আইনটি সংশোধনের পর কমিশন কাজ শুরু করে এবং বিরোধপূর্ণ জমির মালিকদের কাছে দরখাস্ত আহ্বান করে। কিন্তু বিধিমালা প্রণয়ন না হওয়ায় কাজে হাত দিতে পারেনি কমিশন। এরপর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। স্থবির হয়ে পড়ে তিন পার্বত্য জেলার ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ।
খাগড়াছড়ি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ পুরোপুরি স্থবির হয়ে আছে। বর্তমানে কার্যালয়ের তিনজন স্টাফ দৈনন্দিন কাজ করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁদের একজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, করোনার কারণে কমিশনের কোনো কাজই হয়নি। হয়নি কোনো সভা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো জুম অ্যাপে সভা করলেও, এ কমিশন এ ধরনের কোনো সভা করতে পারেনি। গত এক বছরে একবার অফিস করেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার উল হক। সেটি গত ৯ নভেম্বর।
কমিশন সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৬ সালে আইন সংশোধন হওয়ার পর কমিশনের কাজের গতি পায়। এরপর একাধিক সভা করে কমিশন। এতে কমিশনের সব প্রতিনিধির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। একপর্যায়ে কমিশন পাহাড়ে বিরোধপূর্ণ জমি মালিকদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের কাছে ২৩ হাজার আবেদন জমা পড়ে। আবেদনগুলো নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় শুনানি থমকে যায়।
কমিশনের সচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, কমিশনের সর্বশেষ সভা হয়েছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। মার্চে সভা আহ্বান করা হলেও করোনা মহামারির কারণে সেটি স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে পুরো ২০২০ সাল কর্মহীনভাবে চলে যায়। এর মধ্যে কমিশনে চেয়ারম্যানের মেয়াদও শেষ হয়। তাঁকে আবার নতুন করে নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি গত বছরের ৩১ মে কমিশনে যোগ দেন। কিন্তু করোনার কারণে কোনো কাজ হয়নি।
নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, ‘বিরোধপূর্ণ জমির ২৩ হাজার আবেদন আমাদের কাছে জমা পড়ে। কিন্তু এগুলোর শুনানি হয়নি। কমিশনের কার্যবিধিমালা প্রণয়ন হলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে। না হওয়ায় আমরা আটকে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ও জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির মধ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি সই হয়।