‘মানুষের লোভের কারণে বিয়ানীবাজারের লোলা গাঙ ও বাবুর খাল প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। বিয়ানীবাজার পৌরসভা বাবুর খালের উৎসমুখ দখল করে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে প্রতি বর্ষায় মাথিউড়া ও তিলপাড়া ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় হাজারো মানুষকে।’ লোলা গাঙ ও বাবুর খাল রক্ষায় গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে লোলা গাঙ ও বাবুর খাল অবৈধ দখলমুক্ত করার দাবিতে নবনির্মিত বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বিয়ানীবাজারের সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশ নেন। এ সময় বক্তারা বলেন, ‘খোদ পৌরসভা নদী ও খাল দখল করে বাস টার্মিনাল নির্মাণ করছে, যা আমাদের অবাক করেছে। দেখে মনে হচ্ছে, এখানে নদী ও খালের অন্যান্য অংশ দখল করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।’
স্থানীয় সংগঠক আজিজুর রহমান সেলিমের সভাপতিত্বে ও কামাল আহমেদ মতরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে মূল বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম। তিনি বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিয়ানীবাজার উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত লোলা গাঙের অনেকাংশ দখল করে রেখেছে। মাটিজুড়া গাঙ ও জমিদার খালের মতো লোলা গাঙও হারিয়ে যেতে বসেছে। শুষ্ক মৌসুমে এই গাঙে পানির কোনো চিহ্ন থাকে না বললেই চলে। বাপা ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ এই গাঙ খননের দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছিল। পরে খননের উদ্যোগ নেওয়া হলেও একটি প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিতে সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
কিম আরও বলেন, দখলদারদের হাত থেকে যেখানে গাঙ উদ্ধার করার কথা, সেখানে বিয়ানীবাজার পৌরসভা বাবুর খাল দখল করে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করে এই খালটিকেও নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। এই অপকর্মের বিরুদ্ধে এখনই প্রতিরোধ না গড়ে তুললে বিয়ানীবাজার উপজেলাকে ভবিষ্যতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তাই অবিলম্বে বাবুর খালের উৎসমুখ দখলমুক্ত ও লোলা গাঙ খনন করার দাবি জানান তিনি।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বাপা সিলেট শাখার যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ বলেন, নদী ও খালের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত রাখার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের হলেও বিয়ানীবাজারের প্রশাসন তা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী দেশের নদ-নদী রক্ষার জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে স্থানীয় প্রশাসন সে নির্দেশনা অবজ্ঞা করছে। বিয়ানীবাজারের প্রশাসন নদী ও খাল রক্ষার চেষ্টা না করে দখলদারদের সুযোগ করে দিচ্ছে; যা এই অঞ্চলের ইকো সিস্টেম নষ্ট করছে। তাই অবিলম্বে বাবুর খালের উৎসমুখ থেকে দখল উচ্ছেদ ও লোলা গাঙ বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে খনন করতে হবে।
মানববন্ধন চলাকালে সংহতি জানিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দুষ্কাল প্রতিরোধ আন্দোলনের সংগঠক, ইমজার সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দেবু, ইমজার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সজল ছত্রী, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক ইয়াহইয়া মারুফ।